
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি এক বক্তৃতায় এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা দুই বাংলার রাজনীতি ও কূটনীতিতে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তার মূল বক্তব্য ছিল, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভারত সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছে।” এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয় প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন।Bangladeshi cuisineBangladeshi cuisine
আশ্রয় ও রাজনৈতিক কূটনীতি
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই গুঞ্জন ছিল যে, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য সেই গুঞ্জনকে আরও জোরালো করেছে। তিনি এই ঘটনাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ভারসাম্য ও পররাষ্ট্রনীতির জন্য প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত এমনভাবে রাজনৈতিক পরাজিতদের আশ্রয় দিয়ে এক ধরনের ‘ছায়া নির্বাসন কেন্দ্র’ তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল হতে পারে।
নাগরিকত্ব ও শরণার্থী ইস্যু
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বক্তব্যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টিতে সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের নাগরিকত্ব নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “বাংলায় কথা বললেই কি সে বাংলাদেশী হয়ে যাবে?” তিনি বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি বিদেশী তকমা দেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানান এবং বলেন যে এই ধরনের চিহ্নিতকরণ হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদের জন্ম দিচ্ছে।
একইসাথে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুকেও সামনে আনেন। বিজেপি নেতাদের বক্তব্যকে আক্রমণ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বলা হচ্ছে ১৭ লাখ রোহিঙ্গা ভারতে আছে। তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করছি কে বলল ওরা রোহিঙ্গা?” তিনি স্পষ্ট করেন যে, রোহিঙ্গারা দেখতে বাঙালির মতো নয় এবং তাদের ভাষাও বাংলা নয়। এর মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়, নাগরিকত্ব এবং রোহিঙ্গা ইস্যুকে আলাদাভাবে দেখার আহ্বান জানান।
মমতার অবস্থান: প্রতিবাদ ও মানবিকতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য একদিকে যেমন দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আশ্রয়নীতি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, অন্যদিকে বাংলাভাষী মানুষের প্রতি তার মানবিক অবস্থানকেও তুলে ধরে। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত জনতার প্রতি তার সমর্থন রয়েছে। তার এই মন্তব্য ভারতের আশ্রয়ে থাকা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।