খোদ আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ও সিলেট জেলা বারের নির্বাচনে বিএনপিপন্থি প্রার্থী একাধিকবার বিজয়ী হওয়ার নজির রয়েছে। স্বৈরাচার গোষ্টির সকল আয়োজন ভেস্তে দিয়ে বিজয় নিশ্চিত করেছিল বিএনপি দলীয় আইনজীবিদের ঐক্যবদ্ধ নিশানায়। কিন্তু জনরোষে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা যখন দিশেহারা এমন মুর্হুতে সিলেট জেলা বারের নির্বাচনে ওই দলপন্থিদের বিজয় ভাবিয়ে তুলেছে জুলাই আগস্ট চেতনার ধারক ও বাহকদের।
বিজয়ের সকল হিসেব নিকেষ সামনে থাকার পরও পরাজিত হয়েছেন বিএনপিপন্থিরা। তাদের চোখের সামনে নয়, বরং নৈপথ্য সহযোগীতায় এ বিজয় নিশ্চিত করেছে আ’লীপন্থিদের। বিজয়ে আওয়ামীলীগ শিবিরে বিরাজ করছে আনন্দের বন্যা। ওই বিজয় নিশ্চিতে সহযোগীতা করেও মূখ লুকিয়ে হাঁটছেন বিএনপিপন্থি কতিপয় আইনজীবি। বিষয়টি হালকা করে দেখছেন না বিএনপির কেন্দ্রিয় নীতি নির্ধারকরা। এর মধ্যে দিয়ে আগামীর পথ চলার অশিন সংকেত হিসেবে মনে করছেন তারা। ঘরের শক্র বিভীষন, সেই হিসেবে এখন বিএনপির কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। সেকারনে চূলচেরা বিশ্লেষন করে উপযুক্ত প্রতিকারে নেমেছে দলটি।
পরাজয়ের জন্য কেবল বিএনপিপন্থি আইনজীবি নয়, দলটির সিলেট মহানগর নেতৃবৃন্দের দায়ও কম নয়। দলের স্থানীয় সূত্র বলছে, সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের অতীত বর্তমান ঘাটাঘাটি জরুরী। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দলীয় কর্মকান্ডের চেয়ে ব্যবসায়ীকভাবে তারা ছিলেন সুপরিচিত। জনপ্রতিনিধি বা দলীয় ব্যানার ছিল কেবল অলংকার। আওয়ামলীগের কাছে তারা ছিলেন নিজের লোক। খোলামেলা করে বলার দরকার নেই, যাচাই বাচাই করলে, দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সে বিষয়টি পরিস্কার হবে, এমনটি মনে করছেন বিএনপির তৃণমুল নেতাকর্মীরা। আইনজীবি নিবার্চনে পরাজয়ের পর তাদের অবস্থান নিয়েও ক্ষেপেছে সাধারন নেতাকর্মীরা। এবার তাদের ব্যাপারেও নজর দিয়েছে কেন্দ্র । সেকারনে সিলেট মহানগর কমিটিকে শোক করেছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশটি পাঠানো হয়। নোটিশটি মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বরাবর পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে সিলেট মহানগর বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সম্প্রতি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে বিজয়ী করার জন্য সিলেট মহানগর বিএনপি যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আপনি ও সাধারণ সম্পাদকের উদাসীন এবং নির্বিকার ভূমিকার জন্য জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের বিপর্যয় ঘটে। সুতরাং এহেন দায়িত্বহীনতার কারণে কেন আপনাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব আগামী ৩৬ (ছত্রিশ) ঘন্টার মধ্যে দলের নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেয়ার জন্য আপনাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’
এরআগে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম’ কেন্দ্র থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনকে দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীপন্থী দুই আইনজীবী। গত ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের পরদিন ভোরে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে সিলেট বিএনপি পরিবারে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সংশ্লষ্টি একাধিক সূত্র বলছে, দলের দূর্যোগে রাজনীতিক কর্মীরা রক্ত দেয়, জেল জুলমের শিকার হয়। অথচ সুসময়ে তারা হয় নেতৃত্ব হারা। সুবিধাভোগীরা দু:সময়ে ক্ষমতাসীনদের সাথে ব্যবসায়িক বা অন্যভাবে নিরাপদে থাকে, গা বাঁচিয়ে চলে। সেই তারাই সু:সময়ে দলের নেতৃত্ব কেড়ে নেয়। তাদের কাছে কোন চেতনা বা আদর্শের দাম নেই, তারা সবকিছুতেই নিজেদের ফায়দা আগে খুঁজে। এমন চিত্র সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব ঘিরে বিরাজমান। তাই রাজনীতিক নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হলে, ফেঁসে যেতে পারেন সিলেট মহানগর বিএনপির পদবীধারী অনেক শীর্ষ নেতা।
সুত্রঃ ইনকিলাব
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |