
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ছাত্রদলের লাখো নেতাকর্মীকে তারা শান্ত রেখেছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতাকে নিয়ে অশ্লীল স্লোগান দেওয়ার পরও নেতাকর্মীদের শান্ত রাখা হয়েছে। কারণ, তারা দেশে কোনো অস্থিতিশীলতা চান না। ছাত্রদল দেশের সব ক্যাম্পাসে ‘সহনশীলতার রাজনীতি উপহার’ দিয়ে চলেছে। সেখানে প্রতিনিয়ত ‘মব’ চললে ছাত্রদল শান্ত থাকবে না, সারা দেশে রাজপথে এর প্রতিবাদ জানাবে। যদি বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হয়, এর পুরো দায়ভার জামায়াত-শিবিরকে নিতে হবে।
মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট এবং সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল শুরুর আগে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। একই দাবিতে এ দিন ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘মব’ কালচারের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি- আগামীতে এ ধরনের অস্থিতিশীল কোনো ঘটনায় যদি ‘ক্যাম্পাস ক্রস’ ইস্যু করা হয় এবং মব ক্রিয়েট করা হয়, এর দায়-দায়িত্ব গুপ্ত সংগঠনকে বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যার ঘটনায় ছাত্র শিবির যেভাবে মব সৃষ্টি করেছে, বিক্ষোভ করেছে সেভাবে সাম্য ও পারভেজ হত্যার বিচারের দাবিতে কোনো ক্যাম্পাসে মিছিল করেনি। এটা দ্বারা প্রমাণিত হয়, ১৯৭১ সালের মতো একই ধারায় আজও তারা গুপ্ত রাজনীতি অব্যাহত রেখেছে।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে শিবিরের এক-দুজন সমন্বয়ক ছাড়া রাজপথের আন্দোলনে আর কারও অংশ নেওয়ার কোনো তথ্য নেই। রাজপথে তারা কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ‘কথিত’ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে ছাত্রদলের বিপক্ষে মব সৃষ্টি করেছে।
এর আগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুরের আগেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন ছাত্রদলের বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা। সেখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরসহ রাজধানীর নানা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, থানাসহ বিভিন্ন ইউনিটের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। তাদের হাতে ছিল ব্যানার ও ফেস্টুন, মাথায় ছিল দলীয় ও জাতীয় পতাকা। এ সময় ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের স্লোগানে নয়াপল্টন এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। নেতা-কর্মীরা ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘জিয়াউর রহমানের বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘রাজাকার আর স্বৈরাচার, মিলেমিশে একাকার’, ‘পিন্ডি যাবে রাজাকার, দিলি গেছে স্বৈরাচার’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিলে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বেলা ২টায় মিছিল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শুরু হয় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। মিছিলটি পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কাকরাইল, মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাব, কার্জন হল, টিএসসি হয়ে শাহবাগে এসে শেষ হয়। সেখানে পৌনে পাঁচটার দিকে শাহবাগ মোড় অবস্থান নেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এর ফলে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং অনেক যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছাতে হেঁটেই রওনা দেন। মৎস্য ভবন, নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ আশপাশ এলাকার সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান করার পর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।