
দেশজুড়ে: ফেসবুকে পোস্ট লিখে আত্মহত্যাকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তাঁর সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকি আম্মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। গত শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে তাঁদের আটক করা হয়। অবন্তিকার সহপাঠী সেই রায়হান সিদ্দিকী আম্মান-এর বাড়ি ঈশ্বরদীতে।।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় বাদী হয়ে তার মা কুমিল্লায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনায় মামলা করেছেন বলেন জানা গেছে। মামলায় রায়হান সিদ্দিকি আম্মান ও প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আসামি করা হয়।ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকি আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাঁদের কুমিল্লা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।এর আগে শনিবার দুপুরে শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করতে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে ১২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। অবন্তিকা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা শহরে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন।অবন্তিকার কয়েকজন বন্ধু গণমাধ্যমকে জানান, ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তার সহপাঠী আম্মানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নিপীড়নের অভিযোগ করেন। ওই পোস্টে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে আম্মানের পক্ষ নিয়ে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও করেন, সেখানেই আত্মহত্যার কথা বলেন অবন্তিকা।এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীকার আত্মহত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান এর নাম গণমাধ্যমে উঠে এলে এবং ঈশ্বরদীতে তাঁর বাড়ি এ খবরে পাবনা জেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রায়হান সিদ্দিকী আম্মান এর পুরো স্কুলজীবন কেটেছে তার নিজ বাড়ি ঈশ্বরদীতেই। ঈশ্বরদী শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের শেষ সীমানা পোড়ারদাইর গ্রামের একটি মসজিদের পেছনে আম্মানের পৈতৃক ভিটা। এখানেই বাবা–মা ও আত্মীয়স্বজনের বাস। বাবা পেশায় কৃষিপণ্য ও ভুসিমাল ব্যবসায়ী।
দুই ভাইয়ের মধ্যে আম্মান ছোট। বড় ভাই রুম্মান সিদ্দিকী ঢাকায় লেখাপড়া করেন।গতকাল রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে পোড়ারদাইড় গ্রামে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে যান। গ্রামের বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অবন্তীকার আত্মহত্যার বিষয়টি গ্রামবাসীকেও ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। তবে অবন্তীকার আত্মহত্যার পেছনে আম্মানের প্ররোচনার অভিযোগ নিয়ে অনেকে মন্তব্য করতে চাননি।
আম্মানের চাচাতো ভাই পরিচয়ে সাইফুল্লাহ নামে এক যুবক বলেন, ‘চাচা (আম্মানের বাবা) বাড়িতে নেই।’ এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে আম্মান ষড়যন্ত্রের শিকার বলে তিনি দাবি করেন। বাড়ির সামনে সাংবাদিকের আগমন দেখে প্রতিবেশী আমিরুল ইসলাম এগিয়ে আসেন। তিনি কিছু একটা বলতে চাইলেও সাইফুল্লাহ তাঁকে থামিয়ে দেন।
আম্মানের চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী সাইফুল্লাহ নিজের মোবাইল থেকে কল দিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কথা বলিয়ে দেন আম্মানের বড় ভাই রুম্মানের সঙ্গে। রুম্মান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা কারও সঙ্গে কথা বলতে চাই না। কথা বলবেন আমাদের আইনজীবী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িতে এখন শুধু মেয়েরা আছেন। তারা বাইরের পুরুষদের সঙ্গে কথা বলবেন না।’ এরপর তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।সাইফুল্লাহ জানান, আম্মান ছোটবেলায় আওতাপাড়া কিন্ডারগার্টেনে পড়াশোনা করেন। বাঁশেরবাদা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকের লেখাপড়া শেষ করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। এরপর থেকে ঢাকাতেই নিয়মিত আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে আম্মান মাঝেমধ্যে কয়েকজনকে প্রাইভেট পড়াতেন। তাদের অনেকেই আম্মান ও অবন্তিকার সঙ্গে ‘ঝামেলা’র বিষয়টি জানতেন। তাঁদের একজন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে অনার্সের শিক্ষার্থী সজিব। পোড়ারদাইড় গ্রামেই তাঁর বাড়ি। সজিব বলেন, ‘প্রাইভেট পড়ানোর সময় ভাইয়া (আম্মান) এক ছাত্রীর সঙ্গে কিছু সমস্যার কথা আমাকে বলেছিল। পরে আর এ বিষয়ে কথা হয়নি ভাইয়ার সঙ্গে।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |