অন্তর্বর্তী সরকার ও তার সব কার্যক্রমের বৈধতা প্রশ্নে নতুন এক অধ্যাদেশ জারি হতে যাচ্ছে শিগগিরই। ইতোমধ্যে অধ্যাদেশটির চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে ফেলেছে বর্তমান অনর্বর্তী সরকার, যেখানে তাদের মেয়াদ উল্লেখ আছে পরবর্তী সংসদ গঠনের আগ পর্যন্ত।
অধ্যাদেশটি জারি হলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা কোনো উপদেষ্টার নিয়োগে কোনো ত্রুটি থাকলে, শুধু এ কারণে তাদের কোনো কাজকে আর অবৈধ বলা যাবে না। এ সম্পর্কে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। এমনকি মামলাও করা যাবে না।
এমন সব বিধান রেখে গত ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ ২০২৪ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়নি এটি। এখন চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় পরবর্তী ধাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিষয়টি।
অবশ্য আইনজীবীরা বলছেন, এই অধ্যাদেশ আরও আগে জারি না করায় জন্ম হয়েছে অনেক প্রশ্নের। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরদিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে শুরু থেকে এই সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।
এবার অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতাকে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ নামে। যার চূড়ান্ত খসড়া পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট নয়। ত্রয়োদশ সংসদ গঠিত না হওয়া এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ পর্যন্ত ক্ষমতা থাকবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের। এই সরকারের কোনো কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বা অন্য কোনো আদালত কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না, এমনকি একে অবৈধও ঘোষণা করতে পারবে না। পাশাপাশি এ বিষয়ে কোনো মামলা বা আইনি প্রক্রিয়াও চালানো যাবে না।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, গণঅভ্যুত্থানের যে আইনি বৈধতা এটি শুরুতেই একটি প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার জারি করে করলে ভালো হতো। তা না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাস্তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এজন্যই বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।
এদিকে সরকারি সূত্র বলছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও রাষ্ট্রের নির্বাহী কাজ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য এই অধ্যাদেশ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ জারি করবেন।
তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কতজন হবেন, তা অধ্যাদেশের খসড়ায় সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টা যতজন নির্ধারণ করবেন, ততজন উপদেষ্টার সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি স্বনামধন্য এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। আর প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী অন্য উপদেষ্টারা নিযুক্ত হবেন বলে অধ্যাদেশের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও ২০ জন উপদেষ্টা রয়েছেন।
খসড়ায় আরও উল্লেখ আছে, এমন কোনও ব্যক্তি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা পদে থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে সম্মত না হন।
প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ বিষয়ে এতে বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী, সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়া এবং নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে কার্যভার গ্রহণ করবেন, সেই তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োগ করা সব ক্ষমতা, অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, জারি করা প্রজ্ঞাপন, আদেশ, কর্মকাণ্ড ও গৃহীত ব্যবস্থা আইনানুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। সুপ্রিম কোর্ট বা অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ এর বৈধতা সম্পর্কে কোনোভাবেই প্রশ্ন উত্থাপন বা একে অবৈধ বা বাতিল করতে পারবে না।
সুূুত্রঃ জুমবাংলা
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |