
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে। হাসিনার নেতৃত্বাধীন গত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।
গত এক দশক ধরে এই ট্রাইবুনালের বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে ত্রুটি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। অন্যদিকে এই ট্রাইবুনালের কার্যক্রম ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড’ অনুসরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার।
সময়ের ব্যবধানে টবি ক্যাডম্যান এবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ উপদেষ্টা। আর বিচারের কাঠগড়ায় শেখ হাসিনা। তার মামলার রায় ঘোষণার ঠিক আগে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছেন টবি ক্যাডম্যান। যেখানে ট্রাইবুনালে অতীত থেকে বর্তমান কার্যক্রমের ‘পার্থক্য’ নিয়ে নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। ই-মেইলে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন যুগান্তরের আন্তর্জাতিক বিভাগের সহ-সম্পাদক আবদুল মজিদ চৌধুরী।
যুগান্তর: জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরও তিনজনের মামলার রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবারও আলোচনায়। ক্ষমতায় থাকাকালীন হাসিনা এই ট্রাইব্যুনালে বিরোধী রাজনীতিবিদদের বিচার করেছিলেন। সেই সময়, খ্যাতনামা মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে জাতিসংঘ পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
এবার হাসিনার মামলা এবং বিচারকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মান কতটা বজায় রাখতে পেরেছে ট্রাইব্যুনাল? ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে এই মামলায় আপনার অবস্থান শুনতে চাই।
টবি ক্যাডম্যান: এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিষ্ঠা এবং এর আইনি কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই নেওয়া হয়েছিল। মূলত তার সরকারেরই গঠিত এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে তাকেই বিচারের মুখোমুখি করছে—একটি প্রতিষ্ঠান যাকে তার সরকার আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বলে প্রশংসা করেছিল।
যদিও অতীতের ট্রাইব্যুনাল বিচারগুলো গুরুতর প্রক্রিয়াগত ত্রুটিতে আক্রান্ত ছিল, যার মধ্যে বিচারক ও প্রসিকিউশনের অনিয়মের অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত ছিল, এরপর উল্লেখযোগ্য সংস্কার আনা হয়েছে এসব ত্রুটি দূর করতে। এই সংস্কারগুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য ছিল বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসা এবং যাতে সব অভিযুক্তই ন্যায়বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা পায়।
অবশেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রসিকিউশন যে প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তা দণ্ড দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কিনা এবং পুরো বিচারপ্রক্রিয়া ন্যায়সংগতভাবে পরিচালিত হয়েছে কিনা।
যুগান্তর: ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার নিযুক্ত কোনো আইনজীবী নেই। যদিও তাদের সেই সুযোগ ছিল, তারা তা কাজে লাগায়নি। রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দলকে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়েছিল। আপনার কি মনে হয় অভিযুক্তরা যদি আইনজীবী নিয়োগ করত তাহলে বিচারের মান আরও ভালো হত?
টবি ক্যাডম্যান: শেখ হাসিনা ট্রাইব্যুনালের কার্যধারায় আইনজীবীহীন ছিলেন—এমন দাবি সঠিক নয়। বাস্তবে, ভারতে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে থাকার তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত এবং ট্রাইব্যুনালের জারি করা একাধিক সমনের প্রতি তার সাড়া না দেওয়াই ট্রাইব্যুনালকে তার আইনগত স্বার্থ রক্ষার জন্য একজন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করতে বাধ্য করে। নিয়োগপ্রাপ্ত এই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী, যা নিশ্চিত করেছে যে শেখ হাসিনা অনুপস্থিত থাকলেও তার আইনগত অধিকার যথাযথভাবে রক্ষা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবীকে মামলার সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়, তিনি জবানবন্দি প্রদান, সাক্ষী জেরা এবং প্রসিকিউশনের প্রমাণ চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পান—যা কার্যকর আইনগত সওয়াল–জবাবের মূল দায়িত্বগুলোকেই প্রতিফলিত করে।
অবশেষে, পুরো প্রক্রিয়া কঠোরভাবে ন্যায়, নিরপেক্ষতা ও যথাযথ প্রক্রিয়ার নীতিমালা অনুসরণ করেছে কিনা এবং পুরো বিচার চলাকালীন শেখ হাসিনা দক্ষ আইনগত প্রতিনিধিত্ব পেয়েছেন কিনা—তা পর্যালোচনা করাই ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের দায়িত্ব।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) আইনি পুনর্গঠনের প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন। ফাইল ছবি © আবদুল মজিদ চৌধুরী
যুগান্তর: এই মামলায় শেখ হাসিনার মতোই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এখনো পলাতক। অন্য অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন একজন ‘রাজসাক্ষী’। তাকে রাজসাক্ষী করার ধারণাটি কিভাবে প্রসিকিউশন দলের মাথায় এলো বা কিভাবে এটি সম্ভব হয়েছিল?
টবি ক্যাডম্যান: বিচারপ্রক্রিয়া এখনো চলমান এবং ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা রায় ঘোষণা করেননি—এ অবস্থায় এ বিষয়ে মন্তব্য করা আমার জন্য সমীচীন হবে না।
যুগান্তর: জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় চূড়ান্ত নৃশংসতার প্রধান রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় কিনা?
টবি ক্যাডম্যান: সাবেক আইজিপির সাক্ষ্য-প্রমাণ মূল্যায়ন করা এবং আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা যায় কিনা তা নির্ধারণ করা ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের দায়িত্ব। রাষ্ট্রপক্ষের অবস্থান হলো- যে প্রমাণগুলো অত্যন্ত জোরালো এবং অন্য দুই অভিযুক্তের দোষ প্রতিষ্ঠা করে।
ট্রাইব্যুনালে আনা হচ্ছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে। ছবি: সংগৃহীত
যুগান্তর: এই ট্রাইব্যুনাল অতীতে অনেক বিরোধী রাজনীতিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। যা বিতর্কের সঙ্গে বাস্তবায়িতও হয়েছে। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্ব মৃত্যুদণ্ডের তীব্র বিরোধিতা করে। রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। যদি ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়, তাহলে কি আপনি মনে করেন শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ এই মামলায় আরও জটিল হয়ে উঠবে?
টবি ক্যাডম্যান: পূর্ববর্তী বিচারগুলো—যেগুলো শেখ হাসিনার সরকারের আমলে পরিচালিত হয়েছিল এবং বর্তমান বিচারগুলোকে পৃথকভাবে বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিচারপ্রক্রিয়া একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে, সংশোধিত আইনগত কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল পূর্ববর্তী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাগুলোকে যথার্থভাবেই স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনি হত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।
বর্তমান আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড এবং অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হলে উপস্থাপিত প্রমাণ ও তাদের দায়িত্বের মাত্রা বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য কিনা—সেই সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারকরাই নেবেন। এতে কি প্রত্যর্পণ আরও কঠিন হবে কিনা—সে বিষয়ে বলতে গেলে, এটা স্পষ্ট যে, মৃত্যুদণ্ড কিংবা কম দণ্ড দেওয়া হোক, ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার কোনো ইচ্ছাই প্রকাশ করেনি।
শেখ হাসিনা যদি ভারতে অবস্থান ছেড়ে তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, তাহলে সেখানে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে কিনা—তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের আইন এবং সে দেশে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি কোনো ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণে নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা তার ওপর।
বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকরা যত সমালোচনা করুক না কেন, তা পূর্ববর্তী শাসনামলে মৌলিক লঙ্ঘনের স্তরের কাছাকাছিও পৌঁছায় না।
– টবি ক্যাডম্যান
যুগান্তর: বাংলাদেশের ৫৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি হলেন। এই বিচার কি বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, নাকি নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেবে?
টবি ক্যাডম্যান: যদিও বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এই বিচার সত্যিই নজিরবিহীন। প্রথমবারের মতো একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে – এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে, সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অপরাধের জন্য বিচারের অসংখ্য আন্তর্জাতিক উদাহরণ রয়েছে। লাইবেরিয়ার চার্লস টেলরের বিচার থেকে শুরু করে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার স্লোবোদান মিলোসেভিচ এবং সম্প্রতি ইসরাইল, সুদান এবং মিয়ানমারের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেখিয়েছে যে, এই ধরনের গুরুতর অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা রাজনৈতিক অবস্থান বা জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে।
এই মামলাটি বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য নজির স্থাপন করবে, এই নীতিকে আরও শক্তিশালী করে যে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়মুক্তি সহ্য করা হবে না- এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাপী জোরদার করবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মুখে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ওইদিনই দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার পতনে ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত
যুগান্তর: মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের বিচার বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। সমালোচকরা শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি এবং নিপীড়নের দ্বারা চিহ্নিত করেছেন। ট্রাইব্যুনাল কি তার মামলার রায়ের মাধ্যমে এই মামলাটিকে ‘পাঠ্যপুস্তকে’ উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে?
টবি ক্যাডম্যান: এর আংশিক উত্তর উপরেই দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ এবং বিচারকদের দায়িত্ব হলো দোষী না নির্দোষ তা নির্ধারণ করা। শেখ হাসিনার শাসনামলে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘটিত বহুবিধ অপরাধের বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রমাণভিত্তিক অভিযোগ অবশ্যই রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের ভূমিকা হলো তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং উপস্থাপিত প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই মামলায় তাকে জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি এবং নিপীড়নের জন্য অভিযুক্ত করা হয়নি এবং তাই পরবর্তী কার্যক্রমে তিনি এবং তার সরকারের সদস্যরা যে বিস্তৃত অভিযোগের মুখোমুখি হতে পারেন তা নিয়ে অনুমান করা উচিত নয়।
যুগান্তর: রায় যাই হোক না কেন, এই মামলার রায় আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
টবি ক্যাডম্যান: আমার মতে, বাংলাদেশের জনগণ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের রায় মেনে নেবে কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা রায়ের ভিত্তিতে বিচারের ন্যায্যতা মূল্যায়ন করবে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা রায় না দেওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
যুগান্তর: জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে বেশ কিছু সংশোধনী এনেছে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল তার বিচার পুনরায় শুরু করার পর থেকে আইনটি চারবার সংশোধন করা হয়েছে। সরকার বলছে, এই সংশোধনীগুলো আরও সময়োপযোগী করার জন্য করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ড অনুসারে এই সংশোধনীগুলো কি যথেষ্ট?
এই মামলাটি বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য নজির স্থাপন করে, এই নীতিকে আরও শক্তিশালী করে যে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়মুক্তি সহ্য করা হবে না- এই প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বব্যাপী জোরদার করবে।
– টবি ক্যডম্যান
টবি ক্যাডম্যান: প্রধান প্রসিকিউটরের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম। এর মধ্যে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশ্যই, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার জন্য আইনি কাঠামো সংশোধন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যাপার।
যুগান্তর: অতীতের ট্রাইব্যুনাল ঘিরে বিতর্কের কারণে আপনি নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, গত ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক যুগান্তরের সঙ্গে সাক্ষাতকারে আপনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম চেম্বার’ বা ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ চেম্বার’-এর কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, নামটি পরিবর্তন করা হয়নি। নাম পরিবর্তন না করার কারণগুলো কী ছিল?
টবি ক্যাডম্যান: এটি ছিল আমার সুপারিশগুলোর মধ্যে একটি এবং আমি এই অবস্থান বজায় রাখি যে, এটি করা বাঞ্ছনীয়। অবশ্যই, প্রতিষ্ঠানের নাম বিচারের ন্যায্যতার ওপর প্রভাব ফেলে না এবং তাই সংশোধন না করা বিচার ন্যায্য হয়েছে কিনা তার ওপর প্রভাব ফেলে না। আমার সুপারিশটি এই ভিত্তিতে করা হয়েছিল যে, অতীত থেকে বিরতি নেওয়া উচিত এবং বর্তমান বিচারগুলো তার অতীতের উত্তরাধিকার দ্বারা কলঙ্কিত না হয় তা নিশ্চিত করা উচিত।
যুগান্তর: গত এক দশক ধরে আপনি ট্রাইব্যুনালের ‘বিচারের মান’ এবং ‘প্রক্রিয়া’র একজন সোচ্চার সমালোচক। এখন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চিফ প্রসিকিউটরের উপদেষ্টা হিসেবে, অতীতে আপনি যে পার্থক্যগুলো সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তার মধ্যে আপনি কী পেয়েছেন?
টবি ক্যাডম্যান: শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন এবং তাদের সাজা ঘোষণার পর অভিযুক্তদের ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আমি আগেকার বিচারের একজন সোচ্চার সমালোচক ছিলাম। আমি এই সাজাগুলোকে ন্যায়বিচারের স্পষ্ট অস্বীকৃতি বলে বর্ণনা করেছি এবং আমি সেই বর্ণনায় অটল।
এগুলো ন্যায়বিচারের প্রতি অবমাননা ছিল। সমালোচনাগুলো কেবল আইনি কাঠামোর কথাই নয় বরং বিচারক ও প্রসিকিউটরদের অনুশীলন এবং আচরণের কথাও উল্লেখ করেছে। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বিচারকরা সরকারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তৃতীয় পক্ষের (স্কাইপেগেট) নির্দেশনা নিয়েছেন, ডিফেন্স সাক্ষীদের হস্তক্ষেপ করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন, বিদেশি আইনজীবীদের হাজির হতে বাধা দিয়েছেন, ডিফেন্স সাক্ষীদের দেশে প্রবেশে বাধা দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এই বিষয়গুলো ন্যায়বিচারের গতিপথ বিকৃত করার ষড়যন্ত্রের সমান।
বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকরা যত সমালোচনাই করুক না কেন, তা পূর্ববর্তী শাসনামলে মৌলিক লঙ্ঘনের স্তরের কাছাকাছিও পৌঁছায় না।
সূত্র : যুগান্তর









































