প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ অকল্যান্ডের অপরাধ জগতের নতুন ‘আতঙ্ক’ এক বিড়াল, অন্তর্বাস চুরি যার নেশা

অকল্যান্ডের অপরাধ জগতের নতুন ‘আতঙ্ক’ এক বিড়াল, অন্তর্বাস চুরি যার নেশা

বেশির ভাগ বিড়ালপ্রেমীই আতঙ্কে থাকেন, কখন তাদের পোষা বিড়াল কোনো ইঁদুর বা পাখি শিকার করে বাসায় নিয়ে আসে। তবে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরের এক পরিবারের বিড়ালের কর্মকাণ্ড এই সাধারণ দুশ্চিন্তার চেয়েও ভয়াবহ। কারণ, তাদের ১৫ মাস বয়সী বিড়ালটি একা পুরো এলাকায় চুরির রাজত্ব কায়েম করেছে। পুরো এলাকার অপরাধ জগতে এক অপ্রতিরোধ্য নাম ও ‘আতঙ্ক’ বিড়ালটি এবং মজার ব্যাপার হলো সে এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, অকল্যান্ডের সমুদ্র সৈকতের শান্তশিষ্ট মাইরাঙ্গি বে এলাকায় বিভিন্ন বাড়ির পোশাক ও জিনিসপত্র চুরি করে সে এখন সবার চেনা মুখ। আর এই অভ্যাসের জন্য এটিকে এক নতুন নামও দেওয়া হয়েছে, ‘লিওনার্দো দ্য পিঞ্চি।’ চুরি করার ক্ষেত্রে এই বিড়ালের পছন্দও বেশ বিলাসবহুল। চুরির তালিকায় আছে সিল্কের বক্সার আন্ডারওয়্যার, প্রায় ১৮০ মার্কিন ডলারের কদম নতুন ক্যাশমারের সোয়েটারের মতো জিনিসও!

লিওনার্দো দ্য পিঞ্চির মালিক হেলেন নর্থ বলেন, ‘একবার আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিল। হঠাৎ ফোন করে বলে, খুব বাজে একটা ঘটনা ঘটে গেছে! এইবার যা এনেছে, সেটা একদমই খারাপ। পরে দেখি একটা দারুণ ক্যাশমারের সোয়েটার।’ হেসে হেসে তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো ভাবলাম, ভালোই তো, রাখি নাকি!’ কিন্তু পারলাম না।’

এরপর হেলেন নর্থ প্রতিবেশীদের সঙ্গে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে ছবিসহ জিনিসপত্র ফেরত দিতে শুরু করেন। গ্রুপে তাঁর নিয়মিত মেসেজ হতো, ‘এগুলো কি আপনার আন্ডারওয়্যার?’

কিন্তু চুরির মাল দিন দিন বাড়তেই থাকে—ঢাউস ঢাউস মোজা, অন্তর্বাস, এমনকি একবার পাঁচ ফুট লম্বা খেলনা সাপও টেনেহিঁচড়ে এনেছে লিও! একদিন তো রেকর্ড গড়েছে—একাই এনেছে নয়টি আলাদা জিনিস। শিশুর পোশাক থেকে শুরু করে পুরুষদের জামা। হেলেন বলেন, ‘একদিন তো সকাল ৮টা ১০ মিনিটে সে আবার একটা জার্সি নিয়ে এসেছে। অথচ দোকানপাট তখনো খোলেনি!’

যেসব জিনিসের মালিক মেলেনি, সেগুলো ফেরত দিতে এবার নর্থ ফেসবুকে নিজের ঠিকানা ও দুঃখপ্রকাশসহ পোস্ট দেন। এরপর অনেকে এসে নিজেদের হারানো জিনিস চিনে নিয়ে যান। কেউ পেয়েছেন নিজের গোলাপি ও বেগুনি রঙের অন্তর্বাস, কেউ আবার খুঁজে পেয়েছেন নাম লেখা প্রিয় স্পোর্টস জার্সি।

তবে আশঙ্কার কিছু হয়নি। লিওর এই চুরিবিদ্যার কারণে কেউ বিরক্ত হননি। বরং অনেক প্রতিবেশী দুঃখ প্রকাশ করেছেন—‘আহা, আমাদের বাড়ি থেকে তো কিছুই চুরি করেনি!’ হেলেন বলেন, ‘সব প্রতিবেশী ওকে দারুণ পছন্দ করে। অনেকে তো রীতিমতো হতাশ, কারণ তাদের ঘর থেকে কিছুই লিও নেয়নি।’

তবুও লিওর এই ‘চুরির নেশা’ থামাতে অনেক কিছুই চেষ্টা করেছেন হেলেন। কখনো সেটিকে ঘরবন্দী করে রেখেছেন, কখনো নিজেই পুরোনো জামাকাপড় ফেলে রেখেছেন যাতে ও সেগুলো নিয়েই খুশি থাকে। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। তিনি বলেন, ‘সে শুধু ওই জিনিসগুলোই চায়, যেগুলো তার হওয়ার কথা না।’ কেউ অনলাইনে পরামর্শ দিয়েছিল, আরেকটা বিড়াল এনে দাও—খেলাধুলা করে সময় কাটবে। কিন্তু হেলেন সেটা নিয়ে শঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘সে তো অন্যকেও এই কাজ শিখিয়ে ফেলতে পারে!’

লিওর অপরাধজগতে বিচরণের শুরু এক বছর আগে। সে সময়ই তাকে প্রথমবারের মতো বাইরে ঘোরাঘুরির অনুমতি দেওয়া হয়। তার পরিবার এখনো আশা করে, এটা কেবল কিশোর বয়সের খামখেয়ালি—সময় গেলে ঠিক হয়ে যাবে। হেলেন বলেন, ‘আশা করি সে একসময় এসব বাদ দেবে।’ তবে স্থানীয়রা মজা করে লিওনার্দোকে এখন এলাকার নতুন ‘আতঙ্ক’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন এবং মজা নিচ্ছেন।