
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার শেষ খেলাটাই খেলে যাচ্ছেন। ভোট লুটের একের পর এক তথ্য বলে দিচ্ছে, মানুষের রায়ে নির্বাচিত হয়ে এই সরকার আসেনি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মোদি সরকারের। এবার মানুষ রাস্তায় নামবে। এখন ধর্মের তাস ছাড়া বিজেপির হাতে আর কিচ্ছু খেলার নেই। তাই সেই পচে-ধসে যাওয়া পুরোনো ইস্যুকে বারবার পকেট থেকে বের করছেন মোদি। সেই ধর্মের তাস খেলে বৈতরণী পার করার চেষ্টায় আছেন তিনি।
বিহারের জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা সেই আলোচনার এক প্রতিধ্বনী। সেখানে তিনি বলেছেন, দেশের জনসংখ্যার চরিত্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে। জনবিন্যাস, ডেমোগ্রাফিক ম্যাপ নাকি দ্রুত বদলে যাচ্ছে, বিশেষ করে বিহারের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এবং এর জন্য তিনি অনুপ্রবেশকারীদের দায়ী করেছেন। অনুপ্রবেশকারী কারা, কোথা দিয়ে ঢুকবে? আমাদের দুটো বর্ডার থেকে অনুপ্রবেশ হয়, একটা পাকিস্তান বর্ডার, সেখান থেকে তো ঢুকে বাংলা পর্যন্ত আসবে না, আসাম পর্যন্ত আসবে না। তার মানে বাংলাদেশ থেকে ঢুকে তারা আসাম, বিহার, বাংলা, ত্রিপুরা-এসব জায়গায় চলে যাচ্ছে!
এই যে অনুপ্রবেশ, তার জন্য তিনি কাকে দায়ী করছেন? বিরোধী দলগুলোকে, এই অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করার জন্য এবং ভোটের রাজনীতি করার জন্য তাদেরকে ব্যবহারের অভিযোগ করছেন। যা আসলে তিনি বলতে চাইছেন তা হলো, বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের নিয়ে এসে বিরোধীরা সংখ্যালঘুদের সমর্থন নিয়ে দেশ চালানোর চেষ্টা করছেন। কেবল বলছেন না, সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিএসএফ গার্ড এবং অফিসাররা কোন্ দুব্যঘাস ছিড়ছিলেন, যখন এই মুসলমানরা দলে দলে ভারতে ঢুকছিল!
তিনি আরেক ধাপ এগিয়ে একে এক বিরাট ষড়যন্ত্র বলে দিলেন। জানালেন, এর প্রতিকারেই নাকি চালু হতে চলেছে ডেমোগ্রাফিক মিশন! প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন করাই যায়। প্রথমত, অনুপ্রবেশের প্রশ্নটা তো ছেলেখেলার নয়। ফলে দেশের সর্বোচ্চ আসন থেকে কিছু বলতে গেলে সেই বক্তব্যের পক্ষে যথেষ্ট প্রামাণ্য-পরিসংখ্যান থাকতে হবে। তিনি কি কোনো পরিসংখ্যান দিয়েছেন? অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে কতজন ধরা পড়েছে, তার কোনো হিসাব দিয়েছেন? ধরুন ১০০ জন ঢুকতে গিয়ে হয়তো ১০ ধরা পড়েছে। তাই যদি হয়, তাহলেও তো হিসাব মেলে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হিসাব বলছে, ২০১৬ সালে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় মোট ১,৬০১ জন বাংলাদেশি ধরা পড়েছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সংখ্যাটা ৯০৭ ও ৮৮৪; ২০১৯-এ ১১০৯ এবং ২০২০ সালে মাত্র ৯৫৫ জন ধরা পড়েছে। বিএসএফের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৪,৮৯৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার সময় আটক করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে ৪০৬ আর ২০২৪-এ ২,৪২৫ জন এবং ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ৫৫৭ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। সেখানেও কিছু ক্ষেত্রে বিতর্ক আছে। মানে তারা বলছেন যে, তারা ভারতের নাগরিক। এদের ব্যাপারে ভারতের কোর্টে মামলা চলছে।










































