
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (৭৫)। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায়ও তার হাতে হাতকড়া পরানো ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়।
প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় অচেতন ও মৃত্যুপথযাত্রী একজন বৃদ্ধ বন্দিকে হাতকড়া পরানোর প্রয়োজন কি ছিল? অনেকের মতে, এটি শুধু নিরাপত্তার নামে অমানবিকতার নগ্ন প্রদর্শন নয়, বরং মানবাধিকার ও রাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ‘আনকন্ট্রোলড বাওয়েল অ্যান্ড ব্লাডার’ রোগে ভুগছিলেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর অসুস্থ হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয় এবং সেখানেই সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
ছবিতে দেখা যায়, হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা হুমায়ূনের হাত লোহার হাতকড়ায় আটকানো। এই দৃশ্যকে মানবাধিকার কর্মীরা অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, এ ঘটনা শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের মানবিক মূল্যবোধের জন্যই বেদনাদায়ক।
যদিও কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে ছবিটি পুরোনো। কারা অধিদপ্তরের এআইজি (উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, “সিসিইউতে হ্যান্ডকাফ পরানো সম্ভব নয়। পুরোনো ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।” তবে হাসপাতাল সূত্র জানায়, ছবিটি ২৭ সেপ্টেম্বর নেওয়া হয়েছিল যখন তাকে মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে একই ওয়ার্ডে থাকা এক রোগীর স্বজনও জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাদের সামনের বেডেই চিকিৎসাধীন ছিলেন সাবেক এই মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। এক বছরের বন্দিজীবনের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে হাতকড়া পরানো অমানবিক এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এর আগেও বহুবার আমরা এ ধরনের চিত্র দেখেছি।” তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এখনো কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।
অন্যদিকে কারা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসার সময় নিরাপত্তার জন্য বন্দিদের হাতকড়া দেওয়া হয়। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, মৃত্যুপথযাত্রী কিংবা মৃত মানুষকে শিকলবন্দি করার এ প্রথা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।
সূত্র: জনকণ্ঠ