দেশজুড়ে : ‘খাদির মামু তাবিজ মারে, বিংরাজ মেম্বার ফাতলা মারে, সামছুল মেম্বার টিপা মারে আর ফজা ভাই মজা মারে’ এমন আলোচিত কিছু বাক্য সামাজিক মাধ্যমে এখন বেশ ভাইরাল ।।
দোষী কাউকে কিংবা নিজেরা কারো দ্বারা বিপদগ্রস্ত হয়েছেন কিংবা কারো কাছ থেকে ঠকেছেন এমন অনেকেই ‘খাদির মামু ও বিংরাজ মেম্বারকে উপমা’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
কিছু জায়গায় এই দুটি চরিত্র ‘মীর জাফরের’ মতই ব্যবহার করা হচ্ছে। জেনে নেওয়া যাক এর পেছনের রহস্য আসলে কি?
সম্প্রতি হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচিত মুখ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এই আসন থেকে গত ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হননি।
তিনি সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সংসদে এসেছেন। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে আলোচনা শেষ হয়ে যায়নি।
নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে তিনি, ‘খাদির মামু ও বিংরাজ মেম্বার’ কে নিয়ে একটা বক্তব্য দিয়েছিলেন; যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পাশাপাশি চরিত্র দুটি নিয়ে চলছে নানা ট্রল।
ব্যারিস্টার সুমন এক নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘যে খাদির মামুর (কাদির মামা) লাগি আমি জীবন দিলাম, ই মামুই অনে খালি আমারে ফাতলা মারে। ই খাদির মামুর লাগি আমি ঘাম ও রক্ত ফালাইছি, আর মাম্মু অনে মাইনষরে খইন, আরেহ, এ ব্যাটায় কিতা এখটা নাটক শুরু খরছে। মাম্মু অনে বিংরাজ মেম্বারর লগে মিইশ্যা তাবিজ টিফইন। আমি বিংরাজ মেম্বাররে খইলাম পাতলা মারোইন কিতা, তাইন খইন কাদির মামুই তাবিজ দেলাইন। এই বিংরাজ মেম্বারর খতায় আমি ৩টা ব্রিজ বানাইলাম।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচিত চরিত্র খাদির মামু ও বিংরাজ মেম্বার’। তার পোস্টে একজন লিখেন, ‘খাদির মামু আর বিংরাজ মেম্বার দেশ টা শেষ করে দিল। বার বার তাদের চেনার পরও কেনো যেনো তাদের জায়গা দেওয়া হয়’।
মইনুল হোক বুলবুল তার টাইমলাইনে লিখেন, ‘খাদির মামু, বিংরাজ মেম্বার তারা তাবিজ টিফছইন আর ফাতলা মারছইন ব্যারিস্টার সুমনের লগে। আমাদের নিজ নিজ এলাকায় খাদির মামু ও বিংরাজ মেম্বার আছইন, তারার খবর কিতা।’
নুর আহমেদ নামের আরেকজন নিজ টাইমলাইনে পোস্ট করেন, ‘কাদির ওরফে খাদির মামু আর বিংরাজ মেম্বার ওরফে তাবিজ বাবারে অনলাইন ইউজাররা খুব মিস করতেছে।’
কাদির মামু ও বিংরাজ মেম্বার চরিত্র দুটি যেন দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতির বাস্তব চিত্র। সুমন তার বক্তব্যে বলেন, এই দুজন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহবুব আলীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার বিরুদ্ধে কাজ করছেন। দেশের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন আসলেই এলাকা ভিত্তিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের) গুরুত্ব বাড়ে।
স্থানীয় পর্যায়ে ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত এই নেতাদের পক্ষে নিতে সংসদ সদস্য প্রার্থীরা বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালান। তাদের টাকা দিয়ে কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিজ পক্ষে টানার চেষ্টা করেন।
এর আগে থেকেই ব্যরিস্টার সুমন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি করেছেন। এমন স্পষ্টবাদিতার জন্য তিনি রীতিমত ভাইরাল বনে যান। নেটিজেনরা তাকে বাহ্বা জানান। পর্যায়ক্রমে তিনি গ্রামীণ উন্নয়নে মনোযোগ দেন। এলাকার মানুষের কাছে সুমন একটি গ্রহণযোগ্য চরিত্র হয়ে উঠে। এভাবে কাদির মামু ও বিংরাজ মেম্বারদের মতো অনেককে নিয়েই তিনি যৌক্তিক সমালোচনা করেছেন এবং আইনি লড়াইয়ো চালিয়ে যাচ্ছেন।
সবশেষ নির্বাচনে খাদির মামু আর বিংরাজ মেম্বারকে অকৃতজ্ঞই উল্লেখ করলেন সুমন। কারণ তিনি জানান, এই দুজনের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনেক কাজ করে দিয়েছেন। কিন্তু তারা নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে আঁতাত করে সুমনকে হারাতে চেয়েছেন।
এদিকে, তেমনি টাকা বিতরণের কিছু চিত্র উঠে এসেছে দ্বাদশ নির্বাচনের আগেও। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণের অভিযোগে জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই কর্মীকে আটক করেছিলেন জেলা প্রশাসন।
এ ছাড়া বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে টাকা দিয়ে ভোট কেনার লড়াইয়ে নেমেছিলেন নৌকার প্রার্থী সাহাদারা মান্নান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান, শাহজাদী আলম লিপি এবং মোহাম্মদ শোকরানা। এ নিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। বরিশাল-৫ (সদর) আসনে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন রিপনের বিরুদ্ধেও টাকা বিতরণের অভিযোগ উঠে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |