সিলেট নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের সঙ্গে একসঙ্গে হাতে হাত ধরে রাজনীতি
করেন তারা। একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও অন্যজন জেলার সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান। দলীয় গ্রুপিং রাজনীতির কারণে পরবর্তীতে তাদের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্বের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আজাদের বাসায় হামলার ঘটনার পর কেউ আর বন্ধুত্ব ভুলতে পারেননি। ছুটে গেলেন বাসায়। বিষয়টিকে রাজনৈতিক সৌন্দর্য বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আজাদের বাসায় হামলার পরই প্রতিক্রিয়া দেখায় ছাত্রলীগ। পরদিন স্থানীয় এলাকার মানুষও বিক্ষোভ করেছে। তারা হামলাকারীদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আজাদুর রহমান আজাদ সিলেটের টিলাগড়ের আদি বাসিন্দা।
ফলে টিলাগড়ে তার অবস্থান সুদৃঢ়। টানা ৫ বারের কাউন্সিলর। বলতে গেলে টিলাগড়ের নিয়ন্ত্রকই তিনি। কিন্তু আজাদের বাসায় হামলা হবে কেউ ভাবতে পারেননি। হামলায় কিছুটা সন্ত্রস্ত আজাদ নিজেও। হামলার পরপরই একই এলাকার বাসিন্দা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন তাকে দেখতে যান।
মন্ত্রী আজাদের বাসা থেকেই পুলিশ কমিশনারকে ফোন করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব ও টিলাগড়ের আরেক অংশের নিয়ন্ত্রক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি এডভোকেট রঞ্জিত সরকারও তাকে দেখতে যান। এদিকে; ঘটনার পরদিন নিজ নির্বাচনী এলাকা কুলাউড়া সফরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, এমপি।
শুক্রবার রাতে তিনি দীর্ঘদিন পর আজাদের বাসায় গেলেন। সেখানে আজাদকে সান্ত্বনা দেয়ার পাশাপাশি পুলিশ কমিশনার ও ডিআইজিকে ফোন দিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন; নাদেল ও আজাদ সেই ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে এক সঙ্গে রাজনীতি করছেন। এক সময় তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল। নাদেল ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। পরে অবশ্য গ্রুপিং রাজনীতির কারণে তারা পৃথক হয়ে যান। পরবর্তীতে তাদের সম্পর্ক তিক্ততায় পরিণত হয়। আজাদ নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রয়ে গেলেও নাদেল এখন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপিও। সিলেটের রাজনীতিতে সচরাচর নাদেল-আজাদকে এক সঙ্গে দেখা যায় না। মাঠের রাজনীতিতে দু’জনের দূরত্ব রয়েছে। এই অবস্থায় দুঃসময়ে আজাদের পাশে দাঁড়ালেন নাদেল।
এ সময় সেখানে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক মাসুক উদ্দিন আহমদও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন; নাদেল ও আজাদ পাশাপাশি বসেই একে অপরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় আজাদ ঘটনার বর্ণনা দেন। একই সঙ্গে অতীত থেকে তাদের পূর্ব পুরুষের অপরাধের বিরোধিতা করছেন বলে জানান। এসব কারণেই তার ওপর হামলা হয়েছে বলে জানান তিনি। ঘটনা শুনে নাদেলও বলেন; হামলাকারীরা কোনো দলের নয়, তারা অপরাধী। ওদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। নতুবা এলাকায় স্বস্তি ফিরবে না। এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকায় নেই হামলাকারী সন্ত্রাসীরা। তাদের নিয়ন্ত্রকরাও গাঢাকা দিয়েছে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশের পাশাপাশি তাদের খুঁজছে।
এলাকার লোকজন জানিয়েছেন; ঘটনার পরপরই নগরের টিলাগড় ও মিরাপাড়া হয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা এলাকায় ফিরেনি। ওই সময় পুলিশ ও স্থানীয়রা চারজনকে আটক করেছিল। পুলিশ জানিয়েছে; হামলাকারীদের ধরতে তারা ভার্চ্যুয়াল প্রযুক্তিও ব্যবহার করছে। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে গত শনিবার বিকালে কাউন্সিলর আজাদকে দেখতে তার বাসায় যান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান। গ্রুপ রাজনীতির কারণে তাদের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো-মন্দের মিশেল রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ দূরত্ব আরও বেড়েছে। এর মধ্যেও নাসির উদ্দিন খান বিকালে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আজাদের পূর্ব শাপলাবাগস্থ বাসায় যান। এ ঘটনার নিন্দা জানান নাসির খান। এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সিলেট আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |