
দলীয় নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ ও স্থানীয় ভোটারদের চাপে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) নগরীর তল্লা এলাকায় তার পোশাক কারখানা মডেল ডি ক্যাপিটাল ঘেরাও করে দলীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করলে মাসুদুজ্জামান নির্বাচন করার ঘোষনা দেন। এর আগে মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মাসুদুজ্জামানকে আবারো নির্বাচনী মাঠে ফেরাতে আন্দোলনে নামেন। তারা মাসুদুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নিরাপত্তাজনিত কারণ ও পরিবারের অনুরোধে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষনা দিয়েছিলেন মাসুদুজ্জামান।
দলীয় প্রার্থীর এমন সিদ্ধান্তে হতবাক নেতা-কর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। শহরে মিছিল করে তারা মাসুদুজ্জামানকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানান। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে মহানগর বিএনপির এক আলোচনা সভায় সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরাও আপনার পরিবারের সদস্য। আপনার নিরাপত্তার অভাব হলে নেতা-কর্মীরা আপনাকে পাহারা দেবে। আপনি সিদ্ধান্ত বদলে আবারও মাঠে ফিরে আসুন।’ খানপুরে মাসুদুজ্জামানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভা থেকে শুক্রবার মাসুদুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা।
শুক্রবার বিকাল চারটায় নগরীর খানপুরে জড়ো হয় মাসুদুজ্জামানের সমর্থক নেতা কর্মীরা। এখানে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেখানে আপনি নির্বাচন করবেন না এটা হতে পারেনা। আপনার কোনো ভয় নেই আমরা লাখ লাখ নেতা কর্মী রয়েছি। নেতার পরিবার মানে তার কর্মী সমর্থকরাও। ফলে আপনার পরিবার না চাইলেও আমরা চাই আপনি নির্বাচন করবেন।’
ঘেরাও কর্মসূচির আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির জন্য দোয়া করা হয়। এরপর কয়েক হাজার নেতাকর্মী প্রায় দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে নগরীর পশ্চিম তল্লা এলাকায় তার ফ্যাক্টরি ঘেরাও করে। এখানে তারা টায়ারে ও একটি অটোরিক্সায় অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায়ে মাসুদুজ্জামান ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে আসেন। তখন তাকে দেখে নেতা-কর্মীরা সিদ্ধান্ত বদলানোর আহ্বান জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
মাসুদুজ্জামান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘যে ভালোবাসা আপনাদের মাধ্যমে আমি পেয়েছি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, জাতীয়তাবাদী দল যে সিদ্ধান্ত দেবে- আমি সে সিদ্ধান্ত মেনে নেব। আমি বিএনপির মনোয়ন পেয়েছি, নির্বাচনও করবো, ইনশাল্লাহ। গত ১৬ ডিসেম্বর আমি নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এ ঘোষণার মাধ্যমে আমার জাতীয়তাবাদী দলের নেতা-কর্মী, আমার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সারাদেশের বিএনপি নেতা কর্মীরা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় আমি সবার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী।’
মাসুদুজ্জামানের এ ঘোষণায় তার সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। এই বিএনপি প্রার্থী এক সময় যুবদলের একটি ওয়ার্ড কমিটির নেতা থাকলেও ৫ আগষ্টের পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং বিএনপির মনোনয়ন পান। তবে বিএনপিতে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও পরোক্ষভাবে বিএনপি নেতা কর্মীদের সহায়তা করেন। তিনি ছাড়াও সাবেক এমপি এডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট শাখাওয়াৎ হোসেন, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমদ বাবুল এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তিনি মনোয়ন পাওয়ার পরে এই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তার বিরোধীতা করেন। তবে সম্প্রতি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু তাকে সমর্থন জানিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। অন্যদের বিরোধীতাও আগের মতো জোড়ালো নয়।










































