জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশ্বস্ত করেছিল। তাদের ওপর সেই আস্থা রেখেই আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি। এরকম করলে তো যুদ্ধ ছাড়া অন্যকিছু দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। সার্বিকভাবে দেশের নির্বাচন ভালো হয়নি। আমরা এটি আশঙ্কা করেছিলাম। সরকার যেখানে চেয়েছে নির্বাচন নিরপেক্ষ করেছে। আবার যেখানে চেয়েছে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়েছে। তাই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ কারণে নির্বাচনে কেউ আসতেও চায়নি।
আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা তা আমি বলতে পারছি না। তবে আমার মূল্যায়নে সরকারের নিয়ন্ত্রিত এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার কথা না। গতকাল সকালে রংপুর নগরীর সেনপাড়াস্থ স্কাই ভিউ বাসভবন প্রাঙ্গণে তিনি এসব বলেন।
জিএম কাদের বলেন, আমরা এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি না। কারণ এটি করার মতো আমাদের অবস্থা নেই। নির্বাচনে অংশ নেয়া ভুল হয়েছে কি সঠিক হয়েছে তা এখনই মূল্যায়ন করা যাবে না। সামনে দিনগুলোতে দেখে তারপর মূল্যায়ন করা হবে। আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ প্রশাসন, অস্ত্র-পেশিশক্তি ও অর্থের প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা সেই কথা রাখেনি। নির্বাচনের রাত থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের হয়রানি-হামলা করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন ১০ থেকে ২টার মধ্যে সকল ভোটকেন্দ্র দখল করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের এজেন্টকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে নৌকায় সিল মেরেছে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন নীরব ছিল। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংসদে যাবো না এমন সিদ্ধান্ত নেইনি। নির্বাচন বর্জন করলে আমাদের দলের সমস্যা সৃষ্টি হতো, দলীয় রাজনীতি রক্ষায় আঘাত আসতে পারে এমনটি পরিস্থিতি ছিল। তাই তাদের বিশ্বাস করে নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচনে বিশ্বাস কিংবা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলাপ-আলোচনায় আসতে হয়। এ ছাড়া অন্য প্রক্রিয়া হলো যুদ্ধ করা, আমরা তো যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান করতে পারবো না।
বিশ্বাস করে এসেছি কিন্তু তারা বিশ্বাস রক্ষা করেনি। তাই আগামীতে তাদের অন্য কেউ বিশ্বাস করবে না। তাদের গ্রহণযোগ্যতার বিপক্ষে কাজ করবে। দল হিসেবে জাতীয় পার্টি যেখানে ছিল, সেখানেই রয়েছে। আমাদের ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দুর্বল করার চেষ্টা করবে, ধ্বংস করতে চাইবে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা। কিন্তু যেভাবেন আমাদের ধ্বংস করার চেষ্টা করছে সেই প্রক্রিয়া সঠিক হচ্ছে না। দেশবাসী ভবিষ্যতে আমাদের মূল্যায়ন করবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে আমরা আশানুরূপ ফল পায়নি। সরকার মিডিয়ার মাধ্যমে বারংবার প্রচার করেছে আমাদের আসন ছাড় দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র শক্তিশালী প্রার্থীকে রেখে দেয়া হয়েছে। তাদের দল বহিষ্কার করেনি ও দলীয় লোকজন ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। সকলের ধারণা আমরা আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম হয়ে কাজ করছি। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এটি প্রচার করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। নির্বাচনে ঢাকা-১ সালমা ইসলাম, কুমিল্লা-১ আমির হোসেন ভূঁইয়া, জামালপুর-৩ মীর সামসুল আলম, নরসিংদি-২ রফিকুল ইসলাম সেলিম, কক্সবাজার-৪ নুরুল আলম ভুট্টো, শেরপুর-১ মাহমুদুল হক মনি, লালমনিরহাট-৩ জাহিদ হাসান, সিলেট-২ ইয়াহিয়া চৌধুরী, গাইবান্ধা-৩ মাইনুল রাব্বী চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-১ সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-২ আলমগীর শিকার লোটন, চাঁদপুর-৪ সাজ্জাদ হোসেন, কুড়িগ্রাম-৪ একেএম সাইফুর রহমান, বাগেরহাট-৪ সাধন কুমার মিস্ত্রি, জয়পুরহাট-১ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, নীলফামারী-১ তসলিশ উদ্দিন, রংপুর-৬ নুর আলম, রংপুর-৪ মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলসহ অনেক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচিত হয়েছে। অথচ এসব আসনে আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। এখন প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ঘেরাও করে হুমকি দেয়া হচ্ছে। যা দুর্ভাগ্যজনক। দেশের রাজনীতিতে নতুন ধরনের ডায়মেনশন দেখা গেল। যা ভবিষ্যতে সরকারকে এটির জন্য মাশুল দিতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |