
কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, দলীয় সমর্থক এবং সুধীসমাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলোচনা হচ্ছে— দলটির রাজনীতি কার নেতৃত্বে চলবে, নাকি এখনকার মতো দুর্বল অবস্থায় টিকে থাকবে সে প্রশ্নে নানা আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনার ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
কেউ বলছেন, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর হাতে দেওয়া হতে পারে আপৎকালীন নেতৃত্ব। পাশাপাশি দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হিসেবে সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম নিয়ে রাজনীতিতে আলোচনা আছে। এর বাইরে কেউ কেউ কারাগারে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর কথাও বলছেন। তাদের বিরুদ্ধে খুব একটা অভিযোগ নেই।
তবে এই সবকিছুই ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। তিনি সবুজ সংকেত না দিলে দলের সামনে আসতে কেউ রাজি হবেন না।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের আলোচনায় প্রথমেই আসছে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম। চব্বিশের ৫ আগস্টের পর তাকে প্রকাশ্যে কোথাও দেখা না গেলেও তিনি সরকারের ‘নজরদারির’ মধ্যেই রয়েছেন বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। বিদ্যমান সংবিধান মতে, পরবর্তী সরকারের জন্য নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পড়াতে তাকে দরকার পড়তে পারে।
শিরীন শারমিন চৌধুরীর পরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছে ‘ক্লিন ইমেজ’র অধিকারী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং আলোচিত নেত্রী নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম। আইভী এখনো জেলে আছেন। কয়েকটি মামলায় সম্প্রতি তার জামিন হলেও নতুন করে আরও চার হত্যাসহ ৫ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেফতার হলেও পরে জামিন পেয়েছেন। যদিও তিনি রাজনীতিতে এখন নিষ্ক্রিয়। রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। কোথাও কোনো মন্তব্যও করছেন না। তবে সম্প্রতি তার বাসায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত তিনটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের বৈঠক নিয়ে বেশ আলোচনা হয় রাজনৈতিক মহলে।
সাবের হোসেন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত ছাড়া তার দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা কম। শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ, খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বংশধর ছাড়া জাতীয় পার্টি চলবে না- এমন একটি সমর্থনযোগ্য আলোচনা আছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। তবে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের পর সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত ছিল না। দলটির নেতাকর্মীদের জন্যই এটা নতুন এক পরিস্থিতি। ফলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীদের ওপর এ ঘটনা কী প্রভাব ফেলে এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যতই বা কী দাঁড়ায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, আমরা যদি ধরেও নিই যে, বিচারে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো না। কিন্তু তারপরও হাসিনা তো মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে ফিরতে পারবেন না। এছাড়া তার বয়সও আর সাপোর্ট করছে না। ফলে হাসিনা নেই। কিন্তু ফিরে আসার জন্য আওয়ামী লীগের যে বাস্তবতাগুলো ছিল, সেটা একই থাকছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রাসঙ্গিক থাকবে। মৃত্যুদণ্ড সেটাকে ইনফ্লুয়েন্স করবে না। তবে নেতৃত্বে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। শেখ হাসিনা নিজেও কিন্তু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বিদেশি গণমাধ্যমে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমার পরিবারের কাউকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ফলে শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবের হোসেন চৌধুরী বা আইভী রহমানের মতো কেউ বা যাদের বিরুদ্ধে খুব একটা অভিযোগ নেই তারা দলের নেতৃত্বে সামনে আসতে পারেন বলেও মনে করেন তিনি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ের গবেষক আলতাফ পারভেজ যুগান্তরকে বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের দায় আছে, জবাবদিহিতার ব্যাপার আছে। এখন তাদের রাজনীতি অব্যাহত রাখতে হলে সেগুলোর বিষয়ে বক্তব্য লাগবে। দায়িত্ব নিতে হবে, জবাব দিতে হবে। বর্তমান সরকার বা ভবিষ্যৎ সরকার হোক, শহীদ পরিবারগুলোর দিক থেকে তো বিচারের দাবি থাকবেই। সেই বিচার তো কোনো ভাবে বন্ধ করা যাবে না। আবার রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের তো সবাই অপরাধী ছিল না। ফলে রাজনৈতিক দল হিসাবে বা আওয়ামী লীগের যারা নির্দোষ কর্মী, তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে হবে। তার মানে বিচারও চলতে হবে, আবার যারা নির্দোষ তাদের রাজনৈতিকভাবে কাজকর্ম করার সুযোগও থাকতে হবে।
সূত্রঃ যুগান্তর












































