বাবার শাসনই কাল হলো মাদরাসা পড়ুয়া প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাত বছর বয়সী রাহি মনির। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে পড়তে না বসায় বাবা আব্দুর রহিম হাতে থাকা কাপড়ের ব্যাগ দিয়ে শিশু রাহিকে আঘাত করেন। সেই ব্যাগে থাকা ধারালো চাকু দুর্ঘটনাবশত শিশুটির তলপেটে লেগে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময় চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক শিশু রাহিকে মৃত ঘোষণা করেন।
সকাল ৮টার দিকে জেলার কাহালু উপজেলার সাঘাটিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাহির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শজিমেক হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে। সে কাহালু সিদ্দিকীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
ঘটনার পরপরই পুলিশ কাহালু বন্দর থেকে রাহির বাবা আব্দুর রহিমকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার রহিম পেশায় একজন দিনমজুর। তিনি পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজ মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
নিহত রাহির মা রোজিফা বেগম জানান, রহিম পুকুরের ওপরে নেট জাল বুনার কারিগর হিসেবে দিনমজুরিতে কাজ করেন। প্রতিদিন কাজে যাওয়ার সময় তিনি কাপড়ের একটি ব্যাগে করে অতিরিক্ত পোশাক ও কাজের জন্য একটি ধারালো চাকু নিয়ে যান। কাজ শেষে রহিম বাড়িতে আসলে তিনি ব্যাগ থেকে পোশাক ও ধারালো চাকুটি বের করে রাখেন।
রোজিফা বেগম আরও বলেন, গতকাল রহিম কাজ থেকে আসার পর ব্যাগ থেকে তার পোশাক বের করে রাখলেও চাকুটি বের করতে ভুলে যায়। সকালে রাহিকে পড়তে বসতে বললে নানারকম টালবাহানা শুরু করে। এতে রহিম রেগে যান ও তার ব্যবহত ব্যাগটি খালি ভেবে রাহির দিকে ছুঁড়ে মারেন। এ সময় ব্যাগে থাকা চাকুটি মেয়ের তলপেটে লেগে রক্তক্ষরণ শুরু হলে হাসপাতালে নেয়া হয়। রহিম ইচ্ছে করে মেয়েকে মারেনি, দুর্ঘটনাবশত সবকিছু ঘটেছে। কার কাছে আর কি বলবো? যা ক্ষতি সব আমার হয়েছে।
আরও পড়ুন : নিখোঁজের ২৫ দিন পর ছাত্রলীগ নেতার গলিত মরদেহ উদ্ধার
Advertisement
নিহত রাহির চাচি খুশি আক্তার বলেন, ঘটনার সময় পাশের ঘরে ছিলাম। শুধু শুনেছি বড় ভাই রাহিকে বললেন, ‘তুমি লেখাপড়া করো না কেন? আশপাশের ছেলে-মেয়েরা দেখ সকালে লেখাপড়া করতে বসে।’ এই সময় রাহি জেদ ধরে কাঁন্নাকাটি শুরু করে। তার কিছুক্ষণ পরে দেখি রহিম ভাই রাহিকে কোলে নিয়ে দৌঁড়ে বের হয়ে গেলেন। পরে শুনি আমাদের মেয়ে আর নেই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাঘাটিয়া গ্রামে দিনমজুর আব্দুর রহিমের তিন কক্ষের মাটির কাঁচা বাড়ি। একটি কক্ষে তিনি স্ত্রী রোজিফা, নিহত মেয়ে রাহি ও ৮ মাস বয়সী আরেক মেয়ে রোজা মনিকে নিয়ে থাকেন। আরেক কক্ষে তার মা রহিমা বেওয়া ও আরেকটি কক্ষে তার ছোট ভাই স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন। ঘটনার সময় তার স্ত্রী রোজিফা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী খুশি বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। রাহি মনির মর্মান্তিক এই মৃত্যুর খবরে প্রতিবেশী ও আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ এসে রহিমদের বাড়িতে ভিড় করছেন। একদিকে সন্তান হারানোর শোক ও আরেক দিকে রহিমের গ্রেপ্তার। সবমিলিয়ে পরিবারটির সদস্যদের আর্তনাদে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেশী আশিক বিল্লাহ বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। রাহি খুবই সুন্দর ও মিশুক বাচ্চা ছিল। তার বাবা রহিমও ভালো মানুষ। ঘটনাটি দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তাকে কখনও মেয়েকে মারধর বা কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখিনি। এখন আইনগতভাবে যা সমাধান হবে তাই সবাইকে মানতে হবে। তবে এ ঘটনায় গ্রামের সবাই মর্মাহত।
বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার ওমর আলী বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত শিশু রাহির মা রোজিফা, চাচি খুশি ও গ্রেপ্তার বাবার জবানবন্দি মিলে যাচ্ছে। এছাড়াও ঘটনার পর রহিমই মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পরে আতঙ্কে তিনি আত্মীয়দের হাসপতালে রেখে চলে আসেন। ঘটনাস্থল রহিমের ঘর থেকে চাকুটিও জব্দ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে মনে হয়েছে এটি দুর্ঘটনাবশত হত্যা।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |