ভারতের শিল্পপতি রতন টাটা মারা গেছেন। বয়সজনিত সমস্যা নিয়ে দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে সেখানে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
এদিকে মৃত্যুর মাত্র দুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে সেটিই ছিল তার সর্বশেষ পোস্ট। ওই পোস্টে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
মূলত নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর অনুগামীদের জন্য ওই পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, মৃত্যুকালে রতন টাটার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। এজন্য নিয়মিত চেকআপেও থাকতে হতো তাকে। জানা গিয়েছিল, হেলথ চেকআপের জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন রতন টাটা।
কিন্তু বুধবার বিকেলে ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করে, রতন টাটা শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিকভাবে শোনা গিয়েছিল, হঠাৎ রক্তচাপ নেমে যাওয়ায় কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শেষে বুধবার রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
এর আগে গত সোমবার (৭ অক্টোবর) সকালে হঠাৎ খবর ছড়ায় রতন টাটা হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু এর কিছু পরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানান, সেটা ভুল খবর। তিনি ঠিক আছেন।
মাত্র দুই দিন আগে গত সোমবার ভারতীয় এই শিল্পপতি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তার অনুগামীদের জন্য বার্তা দিয়ে তার স্বাস্থ্যকে ঘিরে ছড়িয়ে থাকা গুজবগুলোকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন: “আমার কথা চিন্তা করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ”।
রতন টাটা তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছিলেন, “আমি আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রচারিত সাম্প্রতিক গুজব সম্পর্কে অবগত এবং সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, এই দাবিগুলো ভিত্তিহীন। আমি বর্তমানে আমার বয়স এবং সম্পর্কিত চিকিৎসা অবস্থার কারণে মেডিকেল চেক-আপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি ভালো আছি…”।
৮৬ বছর বয়সী ভারতীয় এই শিল্পপতি তার শেষ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছিলেন, “আমি জনসাধারণ এবং মিডিয়াকে ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।”
প্রসঙ্গত, ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে পারসিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। বাবা নভল টাটার জন্ম গুজরাটের সুরাটে। পরে টাটা পরিবার তাকে দত্তক নেয়। রতন টাটার মা সুনি টাটা আবার সরাসরি জামশেদজি টাটার পরিবারের অংশ। রতন টাটার পিতামহ হরমসজি টাটা জন্মসূত্রেই ওই পরিবারের সদস্য। রতন টাটার যখন ১০ বছর বয়স, সেই সময় তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। রতন টাটার নিজের এক ভাইও রয়েছেন, জিমি টাটা। সৎ ভাই নোয়েল টাটা। নভল টাটা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন সিমোন টাটাকে। নোয়েল তাদেরই সন্তান।
মুম্বাই, শিমলা হয়ে নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলে পড়তে যান রতন টাটা। ১৯৫৯ সালে স্থাপত্য নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হন কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। সাতের দশকে টাটা গ্রুপে ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পান রতন টাটা। ১৯৯১ সালে জেআরডি টাটা দায়িত্ব ছাড়লে রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। প্রথমে তাকে নিয়ে আপত্তি ছিল গ্রুপের ভেতরে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে তার।
যে ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, তাতে গ্রুপের আয় বেড়ে হয় ৪০ গুণ, মুনাফা বাড়ে ৫০ গুণ। মধ্যবিত্তকে চার চাকার স্বপ্ন দেখান রতন টাটাই। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে পরে গুজরাটে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
৭৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেন রতন টাটা। সেই জায়গায় পারিবারিক আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা।
এরপর ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে আরও বেশি করে যুক্ত হয়েছিলেন রতন টাটা।
২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান রতন টাটা। ২০০৮ সালে পান ‘পদ্ম বিভূষণ সম্মান’। মহারাষ্ট্র, আসাম সরকারও তাকে সম্মান প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, আইআইটি বম্বে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রাজা তৃতীয় চার্লসের থেকেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন।
রতন টাটা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। তবে ২০১১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে জীবনে প্রেম এসেছিল বলে স্বীকার করে নেন। চারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার উপক্রম হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক পরিণতি পায়নি বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |