
রাজধানীর ব্যস্ততম মহাখালী ফ্লাইওভারের মাঝামাঝি অংশে থাকা সুরঙ্গ পথটি আবারও আলোচনায় এসেছে। বছরখানেক আগেই এটি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে ফ্লাইওভারের ভেতরে তৈরি হওয়া এই সুরঙ্গ পথ এখন ছিন্নমূল ও ভবঘুরেদের আশ্রয়স্থল এবং অপরাধীদের গোপন আস্তানা হয়ে উঠেছে।
এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ মহাখালী ফ্লাইওভারের দুটি স্প্যান লোহার পাত দিয়ে যুক্ত হলেও মাঝখানে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এতে প্রায় ১২ ইঞ্চি বাই ১৮ ইঞ্চি আকারের ফাঁপা অংশ তৈরি হয়, যার দৈর্ঘ্য ২৪ থেকে ২৭ ফুট। দেখতে অনেকটা দীর্ঘ কক্ষ বা সুরঙ্গের মতো এই স্থানটিতে প্রবেশ করা সহজ না হলেও আগ্রহী যে কেউ চেষ্টা করলে ঢুকতে সক্ষম হয়। ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়ে মাদক সেবনের সরঞ্জাম, ছিনতাই হওয়া নারীদের ব্যাগ, বালিশ-তোষকসহ নানা জিনিসপত্র। দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশই জানান দেয় এখানে বহুদিন ধরে মানুষের বসবাস চলছে।
এখানে নিয়মিতভাবে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের অবস্থান দেখা যায়। গত ১০ সেপ্টেম্বর এক নারীর মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি এই সুরঙ্গে ঢুকে পড়ে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভেতর থেকে উদ্ধার করে বালিশ, তোষকসহ নানা সামগ্রী, যা স্পষ্ট করে যে এটি দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায়ই দেখা যায় কেউ ছিনতাই করে ভেতরে ঢুকে যায় কিংবা ছিন্নমূল নারী-পুরুষরা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে সেখানে আশ্রয় নেয়।
জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে ২ হাজার ২১৯ জন ছিন্নমূল মানুষ রয়েছে। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, শুধু ঢাকাতেই ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা প্রায় পৌনে এক লাখ। আশ্রয়হীন এসব মানুষ ফ্লাইওভার, সেতুর নিচে কিংবা এ ধরনের সুরঙ্গ পথকে ব্যবহার করছে টিকে থাকার জন্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছিন্নমূল ও ভবঘুরেদের জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে না আনলে অপরাধ দমন সম্ভব নয়। তাই মহাখালী ফ্লাইওভারের সুরঙ্গ পথটি দ্রুত বন্ধ করা এবং এসব আশ্রয়স্থল থেকে ভবঘুরেদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নইলে রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: আরটিভি