প্রচ্ছদ হেড লাইন ভোটের নিম্ন হারেই সাফল্য দেখছে বিএনপি

ভোটের নিম্ন হারেই সাফল্য দেখছে বিএনপি

হেড লাইন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াকে আন্দোলনের সাফল্য মনে করছে বিএনপি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই নির্বাচন বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করেছে বলে দলটির মূল্যায়ন। বিএনপির মতো একই মন্তব্য করেছে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া অন্য দলগুলোও। নানা জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে নির্বাচন বর্জন করে এদিন হরতাল পালন করে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো। সাধারণ মানুষকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল এসব দল। বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, এ নির্বাচন জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করেছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাননি—এটাই তাদের বড় অর্জন। এই নির্বাচন দেশের ৬২টি রাজনৈতিক দল প্রত্যাখ্যান করেছে। ‘একতরফা’ ও ‘ডামি’ আখ্যা দিয়ে তারা বলেন, যারা স্বতন্ত্র ও ভিন্ন দলের প্রার্থী, তারাও ঘুরেফিরে নৌকারই লোক। একতরফা নির্বাচনেও যেখানে ৫ শতাংশ ভোট পড়েনি, সেখানে নির্বাচন কমিশন জোর করে সেটাকে ৪০ শতাংশ দেখিয়েছে। জনগণ ও বিশ্ববাসী বুঝে গেছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনটি পাতানো ও প্রহসনমূলক।

ভোটের পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল রোববার দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘একতরফা’ ভোট বর্জনের ডাক সফল হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সবাই ভোটকেন্দ্রে যাননি।’ এজন্য ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশের মানুষ দেখছে, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ বর্জন করেছে। শুধু বিএনপির পক্ষে নয়, নির্বাচন বর্জনকারী ৬২টি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে স্যালুট জানাই যে, তারা গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো দিন আপস করেনি, এবারও করবে না।’ তিনি বলেন, ‘ক্যামেরার ছবি কথা বলে। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ ছবি এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারা দেখতে পারছেন… কুকুরের ছবি দেখতে পারছেন ভোটকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে, শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে। সেই ভোটকেন্দ্রের নাম হচ্ছে ঢাকার মেরাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই যে পরিস্থিতি… সিংহভাগ ভোটকেন্দ্র প্রায় ভোটার শূন্য অবস্থায়।’ ভোট বর্জনের আন্দোলন সফল হয়েছে দাবি করে মঈন খান বলেন, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠার আন্দোলন আমরা করি না। অনেকে বলেছেন, আপনারা এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে সরাতে পারবেন না। কারণ, তারা এমন একটি রাজনৈতিক দল যে, তাদের যে কার্যপদ্ধতি, তাদের যে বিভিন্ন প্রক্রিয়া… আজ ১৫ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ বানোয়াট গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। ৫০ লাখের বেশি বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বিশ্বের ২০০টি দেশে আপনারা কি দেখাতে পারবেন, যেখানে এ রকম ঘটনা ঘটেছে?’

তিনি বলেন, ‘সরকার এই নির্বাচনের আগে ভেবেছিল, বিএনপি থেকে ১০০ বা ১৫০ নামিদামি নেতা নিয়ে যাবে এবং তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাবে। তারা কয়জনকে নিতে পেরেছে? একজনকে নিলেও… আমি এর ব্যাখ্যা করতে চাই না। তাহলে সরকারের এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। তা ছাড়া সরকার ২৮ অক্টোবর আমাদের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে ক্র্যাকডাউন করেও কি আন্দোলন বন্ধ করতে পেরেছে? পারেনি। তারা একটা ভুয়া নাটক সাজিয়েছে, ২০১৪ সালেও নাটক সাজিয়েছিল বিএনপি নাকি আইএস বা তালেবান হয়ে গেছে! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এটা তাদের একটা অপপ্রচার ছিল বিদেশিদের বোঝাতে, সেটাতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বিগত এক সপ্তাহে বিশ্বের খ্যাতিমান গণমাধ্যমে স্পষ্টভাষায় বলা হয়েছে যে, এই নির্বাচনে একটিমাত্র সরকারি দল, নিজেরা অথবা তাদের ডামি প্রার্থী দিয়ে তারা এখানে নির্বাচনটি করছে। এটি একটি ভুয়া ও প্রহসনের নির্বাচন।’ ড. মঈন খান আরও বলেন, ‘হরতাল না হলেও তো ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি এমন হতো না। কোন কেন্দ্রে কত ভোট পড়ল, সেটা কনসার্ন না। কেননা ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো একটি কেন্দ্রে ১০৫ শতাংশও বলতে পারে। কী ভোট হচ্ছে, সেটা সারা বিশ্ব ও বাংলাদেশের মানুষ দেখছে।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই সাজানো নির্বাচন করেছে। সিইসি নিজেই বলেছেন, নৌকার এজেন্ট ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর এজেন্ট দেখতে পাননি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের সব মানুষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জন করেছে। কোনো ভোটার কিংবা সাধারণ মানুষও কেন্দ্রে যায়নি।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট দেখেছি দেশের মানুষ একতরফা ডামি নির্বাচন বর্জন করেছে। তবু সব জায়গায় ছিল ‘সিল মারো, ভাই সিল মারো উৎসব’। অনেক জায়গায় শিশুরাও ভোট দিয়েছে। ভোটার শূন্য নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোট না পড়লেও নির্বাচন কমিশন গায়ের জোরে বলছে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ভোট বর্জনের মাধ্যমে প্রতিরোধের সূচনা হলো।’ এদিকে নির্বাচন শেষ হলেও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, জনগণ ও ভোটারদের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধের সূচনা হলো। তাই বিরতি না দিয়ে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকেই বিএনপির নতুন কর্মসূচি শুরু হতে পারে। সরকার পতনের ‘একদফা’ দাবি আদায়ের পরবর্তী কর্মপন্থা দ্রুত ঠিক করা হবে। এ ক্ষেত্রে কালো পতাকা মিছিল বা সমাবেশের চিন্তা করা হচ্ছে। হরতাল কর্মসূচিও অব্যাহত থাকতে পারে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সরকারের পতন এবং দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চান। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একমত হয়েছেন যে, আন্দোলন-কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়া যাবে না। তবে ভোটের পর নতুন প্রেক্ষাপটে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। গত রাতেও দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়েছে। সেখানে ভোটের সার্বিক বিষয় ও পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সরকারবিরোধী দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে। এখন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী আন্দোলনের ধরন চূড়ান্ত করা হবে। জানা গেছে, আজ সোমবার বিএনপির সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। আর নির্বাচনের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।