
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা মাস্টারমাইন্ডের নাম সামনে এসেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী ঢাকা কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ওরফে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’। কিলিং মিশন বাস্তবায়নে অর্থ এবং অস্ত্রের জোগানদাতা হিসেবেও তার নাম উঠে এসেছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে শাহীন চেয়ারম্যানের সহযোগী হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, শাহীন চেয়ারম্যান ছাড়াও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদকে খুঁজছে পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হাদির ওপর হামলার পর ঘাতকদের ঢাকা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত পালিয়ে যেতে এই হামিদ সরাসরি সহায়তা করেন। মূলত জুলাই বিপ্লবে শরিফ ওসমান হাদির জোরালো ভূমিকা এবং ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েই তাকে ‘হিটলিস্টের’ এক নম্বর টার্গেট হিসেবে হত্যার ছক কষা হয়।
গাজীপুরে স্ত্রী- সন্তানকে হত্যা*র পর স্বামীর আত্মহ*ত্যা
উল্লেখ্য, শাহীন আহমেদ দীর্ঘ সময় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ এই নেতা এলাকায় মাফিয়া ডন হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পুলিশের খাতায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী হিসেবে নাম থাকলেও আওয়ামী শাসনামলে তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই প্রভাব কাজে লাগিয়েই তিনি একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে বসেই গত ৩-৪ মাস ধরে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে দেশে থাকা ‘স্লিপার সেল’ সদস্যদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ কল এবং খুদেবার্তার (এসএমএস) সূত্রে হাদি হত্যায় শাহীন চেয়ারম্যানের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ঘটনার আগে ও পরে কিলারদের সঙ্গে পলাতক ছাত্রলীগ নেতা হামিদের যোগাযোগের প্রমাণও মিলেছে। বর্তমানে ভারতে পলাতক থাকা আরও কয়েকটি গ্রুপ অ্যাপস ব্যবহার করে ঢাকার স্লিপার সেলগুলোর কাজ সমন্বয় করছে, যাদের অনেকেই এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে।
হাদি হত্যা মামলার তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে আরও কয়েকজন রাজনীতিকের নাম উঠে এসেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের গোয়েন্দা সংস্থা ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট টিম যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এছাড়া শাহীন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জের দুজন ছাত্রলীগ নেতাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই মাস্টারমাইন্ডসহ সকল পরিকল্পনাকারীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।













































