প্রচ্ছদ হেড লাইন বাজারে ফিরল ‘লুকানো’ সয়াবিন তেল, তবে…

বাজারে ফিরল ‘লুকানো’ সয়াবিন তেল, তবে…

হেড লাইন: ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে এসেছে চারটি জাহাজ। জাহাজগুলো এমন সময় বন্দরে এলো, যখন বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট চলছে। এদিকে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এই তেল সংকটের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার। ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের যে সাময়িক সংকট চলছে- তা কেটে যাবে। সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয় করায় রোজার আগে আমদানি আরও বাড়বে বলে জানান তারা।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার এমটি আরডমোর শায়ানি ও এমটি ডাম্বলডোর নামে দুই জাহাজে বন্দরে আনা হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন তেল। মঙ্গলবার বন্দর জলসীমায় পৌঁছেছে এমটি সানি ভিক্টরি ও এমটি জিঙ্গা থ্রেশার নামের আরও দুটি জাহাজ। এই দুই জাহাজে রয়েছে ৩০ হাজার ৬০০ টন সয়াবিন তেল। এর মধ্যে এমটি আরডমোর শায়ানি জাহাজ থেকে তেল খালাস শেষ হয়েছে। সোমবারই জাহাজটি বন্দর ছেড়েছে। জাহাজগুলোর মধ্যে সানি ভিক্টরি এসেছে ব্রাজিল থেকে, বাকি তিনটি আর্জেন্টিনা। জাহাজ কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, এই চার জাহাজে সয়াবিন তেল আমদানি করেছে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই ও টিকে গ্রুপ। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের ২৫ হাজার টন, সিটি গ্রুপের ২০ হাজার টন ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ হাজার টন সয়াবিন তেল রয়েছে।

এদিকে কিছুদিন আগে আচমকা বাজার থেকে হারিয়ে যায় বোতলজাত সয়াবিন তেল। সোমবার দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর, সেই লুকানো তেলের বোতল ফিরেছে দোকানে দোকানে; সেজেছে থরে থরে। বাজারে যেন এখন বোতলজাত সয়াবিনের নহর বইছে! গতকাল সোমবার সচিবালয়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে ভরে গেছে তীর, ফ্রেশ, পুষ্টি, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল। কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি বাজারে গতকাল রাতে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। তবে ওইসব বোতলে দাম লেখা ৮১৮ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা স্রেফ দিনদুপুরে ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে তেলের কোনো সংকটই ছিল না। ফন্দি করে কয়েক দিন ক্রেতার নাভিশ্বাস তুলে সরকারকে জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। ভোক্তার দাবি, আজ তেল, কাল চিনি, পরশু হয়তো অন্য কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুবিধা নেবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তাতে একদিকে ভোক্তার খরচ বাড়বে, অন্যদিকে সরকারও পড়বে চাপে। তাই এখন যেসব তেলের বোতল বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলো কখন আমদানি করা হয়েছে, আমদানি দর কত ছিল, কবে নাগাদ বাজারজাত করা হয়েছে– এসব তথ্য খতিয়ে দেখতে হবে।

অন্যদিকে, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানো ও দাম স্বাভাবিক রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ অক্টোবর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পরিশোধিত পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজ– এই তিন পণ্য আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে। ১৯ নভেম্বর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে শুধু আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট রাখে। তাতে বোতলজাত ও খোলা উভয় তেল লিটারে ১২ থেকে ১৩ টাকা কমার কথা ছিল। আবার তেলের দাম এমন সময়ে বাড়ানো হলো যখন খাদ্য মূল্যস্ফীতিও অস্বাভাবকি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তার ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন দাম ঘোষণা করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাজারে এই মুহূর্তে সয়াবিন তেলের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি আছে বলেই গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; ভোক্তারাও অস্বস্তিতে আছেন। এ সমস্যা সমাধানে অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ হিসেবে ট্যারিফ কমিশনের সহযোগিতায় মূল্য পরিস্থিতি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

সূত্র : ইত্তেফাক

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।