প্রচ্ছদ জাতীয় বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। এ নিয়ে সংস্থাটি গত সোমবার (২১ জুলাই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বে সরকার একাধিক সংশোধনী, সংস্কার ও সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। তবে এর মধ্যেও ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে উত্তেজনা বিদ্যমান রয়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে ইউএসসিআইআরএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। ওই প্রতিনিধি দলের কাছে অধ্যাপক ইউনূস ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেও অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা ও বিশ্বাস প্রকাশ্যে পালন করার স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকলেও বাংলাদেশ এখনো দণ্ডবিধির ১৯৫এ ধারার আওতায় ধর্ম অবমাননার আইন বজায় রেখেছে। পাশাপাশি ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা এমন কনটেন্টকে (আধেয়) অপরাধ হিসেবে গণ্য করে, যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে। এসব অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর অনন্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি পরিবর্তন করে ‘বহুত্ববাদ’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। বিএনপি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাক্য পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রস্তাব করেছে, এখানে ‘বহু সংস্কৃতিবাদ’ বা এর সমতুল্য কোনো বাংলা শব্দ ব্যবহার করা হোক। তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অভিযোগ করেছেন, তারা সংস্কারপ্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছেন এবং রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রতিনিধিত্বও সীমিত।

নারী সংস্কার কমিশন নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করতে ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করেছে। তবে হেফাজতে ইসলামের মতো কয়েকটি সংগঠন এসব প্রস্তাবকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করে।

হিন্দু, আদিবাসী, আহমদিয়া ও সুফি সম্প্রদায়গুলো এখনো নানামুখী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ জানিয়ে আসছে।

প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মীয় উসকানিমূলক সহিংসতার আশঙ্কা রয়ে গেছে। কিন্তু বাড়তি পুলিশ মোতায়েন ছাড়া সরকার এখনো এ ধরনের সহিংসতা মোকাবিলায় কোনো পূর্ণাঙ্গ কৌশল উপস্থাপন করতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এ কমিশন জোর দিয়ে বলেছে, সব ধর্মীয় সংখ্যালঘুর নিজ নিজ ধর্ম নির্ভয়ে ও প্রতিশোধের আশঙ্কা ছাড়াই পালন করার অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।