প্রচ্ছদ জাতীয় ‘ফেভার’ নিতে বললে জামায়াত নাকি আ. লীগকে বেছে নেবেন আমজনতার তারেক?

‘ফেভার’ নিতে বললে জামায়াত নাকি আ. লীগকে বেছে নেবেন আমজনতার তারেক?

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আমজনতার দল’র নিবন্ধন না পাওয়ায় সম্প্রতি অনশন করা মো. তারেক রহমানকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। নিবন্ধন না পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করতে দেখা গেছে দলটির এই সদস্য সচিবকে।

দীর্ঘ ১৩৪ ঘণ্টা পর রবিবার (৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারেকের অনশন ভাঙান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।

এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয় মো. তারেক রহমানকে। সেখানে বসেই তিনি দেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে নিজের অবস্থান এবং ভাবনা লিখেছেন।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে সেই লেখা নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন তিনি।

ওই পোস্টে ৭১-এর ইতিহাস বিকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামকে দায়ী করেন মো. তারেক রহমান।

দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ দ্বারা সংগঠিত নাকি আওয়ামী লীগকে দায়ী করতে অন্যকোনও পক্ষ এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারেক রহমান।

“আমাকে যদি ফেভার নিতে বলা হয়, জামায়াত বা লীগ কোনটাকে বেছে নেব” শিরোনামে তার লেখা ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

“চ্যানেল আই এর সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমান এর নামটি সামনে আসে। পরিবারের সকল সদস্যকে পাক বাহিনী হত্যা করে ১৯৭১ সালে। গণ অভ্যুত্থানের পর আমির হামজারা যখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করছিল, একদিন তিনি ফোন দিলেন বললেন তারেক এ কি অভ্যুত্থান করলা, আমাদের ত্যাগ আর কষ্ট নিয়ে কটাক্ষ করছে এরা। আমার লুকিয়ে থাকা পরিবারের সদস্যদের রাজাকাররা খুজে খুজে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে।

পিনাকি বলল, মুক্তিযুদ্ধে ২ হাজার নাগরিক নাকি নিহত হয়েছে।

১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার, যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছিল ৪৫ হাজার। আর যুদ্ধে মারা গিয়েছিল ৮০০০।

পিনাকি বট বাহিনীর অকুন্ঠ সমর্থন নিয়ে ভিডিও ভাইরাল করতে বলে দিলো ২০০০ নাগরিক নিহত হয়েছে। যদি সশস্ত্র ৮০০০ পাকিস্তানি নিহত হয়, তাহলে তাদের দ্বারা নিরীহ, নিরস্ত্র কত বাঙালি মারা গিয়েছিল সে হিসাব করুন।

আজ জামাত ভোটাধিকার নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাদের পছন্দমতো উপায়ে ছাড়া তারা ভোট হতে দেবে না। অর্থাৎ গণঅভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশকে তারা সুস্থ হতে দেবে না। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে প্রতিদিন বিদেশি কূটনৈতিকদের সাথে মিটিং করছে। জামাতের হিন্দুস্তান আর লাহোরের অংশ সক্রিয় হয়েছে।

জামাতের মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে জুলাই নামে একটা কিছু খুব করে দাঁড় করানোর চেষ্টা বহু আগে হতেই করে আসছে।

যেমন, একজন বক্তা দিয়ে বলালো, রাজাকার শব্দ এখন সম্মানের। কত বড় জালিম এরা ভাবতে পারেন।

আর একজন বক্তা দিয়ে যুক্তি দাঁড় করালো, ২৪ এসে গেছে, এখন আর ৭১ এর বয়ান চলবে না।

এই যখন অবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের লাগাতার অসম্মান কলার ধরে টানাটানি, তখন নিজের মাঝে পাপ বোধ জাগে।

এক বড় গায়েবের সাথে লড়াই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে তাদের গায়েব বানিয়ে দিয়েছে ইউনূস সরকার এনসিপি ও জামাত।

সাম্প্রতিক বাসে আগুন লাগছে।

এখানে দুটো ঘটনা ঘটতে পারে, আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে ফিরতে না পারায় প্রতিবাদ হিসাবে এই আগুন লাগাতে পারে।

আবার আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দিতে চায় না এমন গোষ্ঠী বাসে আগুন লাগিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী হিসাবে হাজির করতে পারে।

কিন্তু সমাধান কি?

এভাবেই জ্বলবে বাংলাদেশ।

আমি মনে করি রাজনীতি একটি সামাজিক চুক্তি, যে চুক্তিতে পরাজিতকেও এডজাস্ট করতে হয়, সুস্থ হবার সুযোগ দিতে হয়। যারা যতটা অপরাধী সেটুকুকে বাদ দিয়ে নির্দোষদের রাজনীতির অধিকার দিতে হবে।

আর মূল কথায় আসি, যেখানে শুরু করেছিলাম কাকে ফেভার দেব।

আমি উত্তর দেই, লীগের চেয়ে জামাত হাজার গুনে অপরাধী। কারণ, লাহোরে হেড কোয়ার্টার জামাত, দেশকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে স্বাধীনতার পড়েও। আর লীগতো শুধু ক্ষমতা চেয়েছে।

ক্ষমতা চাওয়ার অপরাধ দেশ বিক্রির চেয়ে বেশি নয়।

আর পিনাকি আমার দলকে হেয় করেছে গত কাল। যখন আমার দল এখনের চেয়ে ৫০ গুন ছোট ছিল, তখন সে সেনাপতি বলেছিল আমাদের। আজ দল বড় হলেও সে তাচ্ছিল্য করছে। পিনাকির পক্ষে থাকলে আমাকে বীরশ্রেষ্ঠ বানিয়ে দিত।

অবশ্য পিনাকির তালিকায় আমি ভিলেন না হিরো, তার চেয়েও বড় শেখ হাসিনার আসামির তালিকায় এক নাম্বার ছিলাম আমি।

এর পড়েও জামাতকে ফেভার দিচ্ছিনা আমি। কারণ, ওরা সার্বভৌমত্বের বিরোধীতাকারী গোষ্ঠী, যারা নিজ দেশের মানুষের মাংস ভিনদেশী শকুনকে সাথে নিয়ে খেয়েছে।

২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের হত্যার বিচার আমি অবশ্যই চাই, কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবী জামাতের, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামাতের এমন ভুয়া বিচার আমি চাই না। জামাতের হাতে আওয়ামীলীগের বিচার আমি চাই না।

আর সাংবাদিক পান্না ভাইকে যদি কথা বলার জন্য জেলে যেতে হয়, তাহলে জামাতের ৩ প্রজন্মকে আজীবন জেলে থাকতে হবে।

হাসপাতাল থেকে লিখা…।”

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন