
খুলনা মহানগর বিএনপির দুই গ্রুপের বিরোধের মধ্যে সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সদর আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এতে মঞ্জু অনুসারীরা উৎফুল্ল হলেও ক্ষুব্ধ ও হতাশ নগর বিএনপির বর্তমান কমিটির নেতা ও তাদের অনুসারীরা।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরুর নির্দেশ দিলেও খুলনায় তার দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়েনি। অন্য দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর এখনও কথা হয়নি। বরং আগামী ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসকে সামনে রেখে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মহানগর বিএনপির বিবাদমান দুটি অংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিপক্ষকে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হচ্ছে।
২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্তর পর থেকে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রয়েছে দুই পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে নগর সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। অন্যপক্ষে রয়েছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও বিএনপির সাবেক নেতাকর্মীরা। গত ৩ বছর ধরে কেন্দ্রীয় ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করছেন তারা।
চলতি বছরের শুরু থেকে খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেন সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। গত মাসে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন মহানগর সভাপতি শফিকুল আলম মনা। আগে থেকেই মাঠে ছিলেন সাবেক সভাপতি ও এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
তিন নেতা পৃথকভাবে প্রচারণা শুরু করায় বিএনপিতে বিরোধ আরও তীব্র হয়। পরে মঞ্জুকে ঠেকাতে আবার একসঙ্গে কাজ শুরু করেন মনা ও তুহিন। গত ২৭ অক্টোবর সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতবিনিময় সভায় তিন নেতাই আমন্ত্রণ পান।
কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ৩ নভেম্বর নজরুল ইসলাম মঞ্জুর হাতেই ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেয় বিএনপি। এতে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে মঞ্জু শিবিরে। সেই তুলনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ মহানগর বিএনপির বর্তমান নেতাদের অনুসারীরা। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কোথাও কোনো মন্তব্য করছেন না।
নেতারা জানান, প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন নেতার মধ্যে এখনও কোনো কথা হয়নি। এর মধ্যে ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মহানগর বিএনপি। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা নগরীর তেতুলতলা মোড়ে সমাবেশ ও র্যালির পৃথক কর্মসূচি দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমেও চলছে বাক্য বিনিময়।
বর্তমান নেতাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের ‘ঘাড় ধরে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে’ বলে মন্তব্য করেন জসিম উদ্দিন নামে এক মঞ্জু সমর্থক। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অন্যরা।
মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব প্রার্থীদের দায়িত্ব দিয়েছেন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে কাজ শুরুর। তিনি (মঞ্জু) এখন পর্যন্ত আমাকে কোনো ফোন দেননি, আমিও দেইনি। দলের মূল নেতৃত্বে যেহেতু আমরা রয়েছি বিপ্লব ও সংহতি দিবসে কর্মসূচি প্রণয়ন করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেটাই করেছি। কেউ পাল্টা কর্মসূচি করলে দায়িত্ব তার।’
নগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘দীর্ঘ ৪২ বছর বিএনপি করছি। ১০৯টি মামলার আসামি হয়েছি, ৯ বার জেলে গেছি। দল আমাকে মনোনয়ন দেবে আশা ছিল। না পাওয়ায় আক্ষেপ নেই, যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তার পক্ষেই কাজ করবো। কিন্তু তারও চেয়ারম্যানের নির্দেশে সবাইকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থাকা দরকার। টিভিতে নিয়মিত সাক্ষাৎকার দিতে পারলেও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না পাওয়াটা দুঃখজনক।’
এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, গত ২৯ অক্টোবর থেকে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন আমি। এখনও অনেক দুর্বলতা অনুভব করায় বাইরে বের হতে পারছি না। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছি না। বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল খুলনায় আসলে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসার কথা রয়েছে।’
পৃথক কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির পদবঞ্চিতরা দীর্ঘদিন ধরেই একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করছেন। ৭ নভেম্বর পৃথক কর্মসূচি দিয়েছেন তারা। এর আগে বসা হলে একসঙ্গেই কর্মসূচি পালন করা হবে।













































