প্রচ্ছদ সারাদেশ প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ছোট্ট মরিয়মের জীবন নিলো মা!

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ছোট্ট মরিয়মের জীবন নিলো মা!

সারাদেশ: পটুয়াখালীর দশমিনায় আলোচিত শিশু মরিয়ম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। জমিজমা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা আর চাচা মিলে মরিয়মকে হত্যা করেছে। মরিয়মকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের রামবল্লভ গ্রামে মরিয়ম হত্যার ঘটনাস্থলে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়মের হত্যাকারী তার মা রিনা বেগম (৩৮) ও চাচা সেন্টু মৃধাকে (৫০) মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গ্রেফতার করার পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এ হত্যাকাণ্ডের তথ্য।

পুলিশ সুপার জানান, জমিজমা নিয়ে উপজেলার বেতাগী সাকিনপুর ইউনিয়নের রামভল্লভ গ্রামের রিনা বেগমের সঙ্গে হারুন মৃধার বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ১ ফেব্রুয়ারি রিনা বেগম তার শিশু সন্তান মরিয়মকে নিয়ে ফুফু ফরিদা বেগমের বাড়িতে বেড়াতে যান।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সেখান থেকে কৌশলে মরিয়মকে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে রিনা বেগম ও সেন্টু মৃধা। পরে রিনা বেগমের ওড়না দিয়ে মরিয়মের মুখ চেপে ধরে এবং চাচা সেন্টু লাঠি দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে মেয়েকে হারানোর নাটক করেন রিনা বেগম।

পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, মরিয়ম হত্যার ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তে নামে। তিনি জানান, হত্যার আগে মরিয়মের মা রিনা বেগম ও চাচা সেন্টু মৃধা জমিজমা বিরোধিতায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়মকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মা রিনা বেগম মেয়ে মরিয়মকে পাশের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নতুন পোশাক পরিয়ে চুল বেঁধে সাজিয়ে গুছিয়ে বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায় নিয়ে যান। সেখানে ওড়না দিয়ে মরিয়মের মুখ বেঁধে রাখে আর চাচা সেন্টু মৃধা মোটা শক্ত লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাথায় আঘাত করে মরিয়মকে হত্যা করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, মরিয়মকে হত্যার আলামত ঢাকতে মা রিনা বেগম রক্তাক্ত পোশাক নিয়ে পুকুরে নেমে সাঁতার জানা মরিয়মকে খুঁজতে থাকেন এবং মরিয়মের নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি বাড়ি না খুঁজে এলাকার মসজিদের মাইকে তার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ প্রচার করতে থাকেন। এছাড়া মরিয়মের মায়ের অসংলগ্ন আচরণ দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। মরিয়মকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত লাঠি ও ওড়না উদ্ধার করেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, ৩ ফেব্রুয়ারি রামবল্লভ অগ্রণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়মকে (৮) বাড়িতে ফিরতে না দেখে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রাত ৮ টায় বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায় মরিয়মের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন তার বাবা মকবুল মৃধা। এসময় শিশুটির মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল এবং গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ রাত ১২ টায় মরিয়মের মরদেহ উদ্ধার করেন।

নিহত মরিয়মের বাবা মো. মকবুল মৃধা জানান, পুলিশ বলেছে মরিয়মের মা রিনা বেগম ও আমার ভাই সেন্টু মৃধা মিলে মরিয়মকে হত্যা করেছে, ঘটনা সত্যি না মিথ্যা বুঝতে পারতেছি না। তবে তারা যদি সত্যি অপরাধী হয়, তাহলে তাদের যেন কঠোর বিচার হয়। এ বিষয়ে দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম মজুমদার জানান, মরিয়ম হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত রিনা বেগম ও চাচা সেন্টু মৃধাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।