
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্তের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। পে কমিশনের সদস্যরা বর্তমানে সব প্রস্তাব ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত ৩০ অক্টোবর বিভিন্ন সমিতি ও অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ হওয়ার পর এখন চলছে সুপারিশ চূড়ান্ত করার কাজ।
তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বর্তমান সরকারের মেয়াদে নতুন পে স্কেল কার্যকর করা সম্ভব নাও হতে পারে। ডিসেম্বরের মধ্যভাগ থেকে শুরু হবে নির্বাচন তফসিল ও রোডম্যাপ বাস্তবায়নের কার্যক্রম, ফলে সরকারের পক্ষে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এর সঙ্গে বাজেট ঘাটতির চাপও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পে কমিশনের সভাপতি ও সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান জানিয়েছেন, “কার্যক্রম দ্রুতগতিতে চলছে, আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা সুপারিশ জমা দিতে পারব। তবে কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, “আমাদের দায়িত্ব সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত, বাস্তবায়নের নয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “পে কমিশনের প্রস্তাবটি রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে। সরকার আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ঠেলে দিতে পারে। সময় খুবই কম, তাই এই সরকারের পক্ষে তা কার্যকর করা কঠিন”
তিনি আরও বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন হয়, কমিশনের মেয়াদ আছে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকার এখন একদিকে নির্বাচনের চাপে, অন্যদিকে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতেও চাপে রয়েছে। তাই হয়তো আলোচনা করতে করতেই সময় পেরিয়ে যাবে।”
অন্যদিকে, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার চায় এই মেয়াদেই নতুন পে স্কেল কার্যকর করতে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশ জমা পড়লে দ্রুত সময়ের মধ্যেই তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
পে কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, নতুন স্কেলে বেতন দ্বিগুণ করার প্রস্তাব আসতে পারে। এতে বছরে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত ব্যয় হবে। গড়ে ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি হলে খরচ দাঁড়াবে ৭০–৭৫ হাজার কোটি টাকা, আর ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে ব্যয় হবে ৬৫–৭০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৪–২৫ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। নতুন পে স্কেল বাস্তবায়িত হলে সরকারের ওপর বড় আর্থিক চাপ সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পে কমিশনের কাজ প্রায় শেষ হলেও নির্বাচন ও বাজেটের বাস্তব চাপের কারণে নতুন বেতন কাঠামো এই সরকারের মেয়াদে কার্যকর হওয়া অনিশ্চিত। ফলে বিষয়টি আগামী নির্বাচিত সরকারের ওপর ন্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
সূত্র : জনকণ্ঠ











































