
টাঙ্গাইল পৌর শহরের সন্তোষ এলাকার আজহার আলী নামের এক মাছ ব্যবসায়ীকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ‘কিলার গ্যাংয়ের’ নামে চিঠি দেওয়ার ঘটনায় টাঙ্গাইল শহর বিএনপির পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোরে টাঙ্গাইলের সন্তোষ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সন্তোষ পুলিশ ফাঁড়ি যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন, টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ, শহর বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রব্বানী, ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহআলম ও সাব্বির হোসেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ‘কিলার গ্যাংয়ের’ নামে চাঁদা চেয়ে আজহার আলীকে চিঠি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আজহার আলী শুক্রবার টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন।
এদিকে ‘কিলার গ্যাংয়ের’ নামে চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি করে বিএনপির পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন চাঁদা দাবির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপরদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, সন্তোষ এলাকায় মাছের ব্যবসা করেন আজহার আলী। ‘কিলার গ্যাং’ নামে একটি দল চিঠি দিয়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সন্তোষে তার মাছের আড়তে নিশা নামের এক কর্মচারীর কাছে কিলার গ্রুপের এক সদস্য চিঠিটি হাতে দিয়ে যায়। শুক্রবার চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এলাকাজুড়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।
এতে লেখা রয়েছে, ‘চিঠি পাওয়ার পর তুই যদি বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে শেয়ার করস বা আইনি প্রক্রিয়ায় যাস তাহলে তোকে কবর দেওয়ার জন্য তোর লাশ পরিবার খুঁজে না পাওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব।’ চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘মনে রাখবি প্রশাসন তোর সঙ্গে সবসময় থাকবে না। আর বাঁচতে পারবি না। তোর সঠিক বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্তে তুইসহ তোর পরিবার সুরক্ষিত থাকবে।’
এ ছাড়াও চিঠিতে লেখা আছে, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাছ ব্যবসা করে যাচ্ছিস। এতে তোর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা তোর কাছে কিছু না। তাই আগামী আগস্টের ৩ তারিখ রোববার সন্ধ্যা ৭টার সময় একটি শপিং ব্যাগে করে কাগমারী মেজর জেনারেল (অবঃ) মাহমুদুল হাসানের বাসার সামনে একটি গাছে ফরহাদের ছবি লাগানো আছে, সেই গাছের নিচে রেখে যাবি।’
এ বিষয়ে আজাহার আলী বলেন, ‘সন্তোষ মাছের আড়তের পাশেই আমার বাড়ি। আমার বাবার নাম কলিম উদ্দিন ফকির। দির্ঘদিন ধরে মাছের ব্যবসা করে আসছি। কখনও কাউকে চাঁদা দিতে হয়নি। গত ৫০ বছরে টাঙ্গাইলে এরকম চিঠি দিয়ে চাঁদাবাজি কখনও হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার কর্মচারীকে অচেনা এক লোক একটি চিঠি দেয়। সে চিঠি পরের দিন শুক্রবার সকালে আমার হাতে দেয়। এ সময় কর্মচারী নিশা বলে, একটি ক্লাব থেকে আপনাকে এই চিঠি দিয়ে গেছে। চিঠি পাওয়ার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। এখনও নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’
এ ঘটনায় পুলিশ নড়েচড়ে বসে। তদন্তে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সন্তোষ বাজারে মাছের আড়তের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। মাছের আড়তে যে চিঠিটি দিতে এসেছিল তাকে শনাক্ত করে। রাতেই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অপর চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইজাজুল হক সবুজ বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্র করে বিএনপির নেতাকর্মিদের ফাঁসানো হয়েছে। আমরাও দলীয়ভাবে ঘটনাটি তদন্ত করছি। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘চিঠি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাঁদাবাজের কোনো স্থান টাঙ্গাইলে হবে না। চাঁদাবাজ যেই হোক বা যেকোনো দলের হোক তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’