প্রচ্ছদ সারাদেশ পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সই তার ঘরবাড়ি!

পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সই তার ঘরবাড়ি!

দেশজুড়ে : শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর মধ্যবয়স্ক এক নারী বসবাস করছেন। তীব্র শীতে ভাঙা অ্যাম্বুলেন্সই তাঁর ঠিকানা। তবে আশেপাশের কেউ তাঁর পরিচয় জানে না।

স্থানীয়রা জানায়, পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সে সংসার পেতে বসা অজ্ঞাতপরিচয় এই নারী মানসিক প্রতিবন্ধী। নাম–পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলেন ‘রুমা’। আর বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট’। ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে ‍‘আদালত’ বলে উত্তর দেন।

গেলো ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সটিতে বসবাস করছেন নিজেকে রুমা বলে পরিচয় দেওয়া এই নারী। তীব্র শীতে কোনো মোটা কাপড় ছাড়াই রাত কাটাচ্ছেন তিনি। কখনো কখনো বিভিন্ন ভবনের খোলা জায়গাতেও রাত কাটাতে দেখা গেছে।

রহস্যময় এই নারী কারও কাছে খাবার চেয়ে খান না। কেউ ভালোভাবে ডেকে খাবার দিলে তবেই খান। স্থানীয় এক চায়ের দোকানী বেশিরভাগ সময় তাঁকে খাবার দেন। অনেক সময় বাজার ঘুরে উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহ করে ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমেই এই নারীর সময় কাটে।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত ছয় মাস থেকে হাসপাতাল চত্বরে দেখা মেলে রুমার। প্রথম দিকে কারও সঙ্গে কথা না বললেও, এখন নাম জিজ্ঞেস করলে ‘রুমা’ বলে উত্তর দেন। ঠিকানা সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা না দিতে পারলেও কোনো আদালত এলাকার ইঙ্গিত করেন তিনি।

সম্প্রতি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘‘ভয়েস অব ঝিনাইগাতী’ ও ‘‘শেরপুর ৭১’’ এর সদস্যরা শীতবস্ত্র ও কম্বল নিয়ে রুমার খোঁজ করেন। তাঁকে পাওয়া যায় পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর। সংগঠনের নেতারা এ অজ্ঞাত নারীর ঠিকানা জানার চেষ্টা করছে।

স্বাস্থ্য সহকারী খাদিজাতুল জান্নাত বলেন, ‘রুমা মানসিকভাবে অসুস্থ। অনেক কিছুই তিনি মনে রাখতে পারেন না। সকালের কথা বিকেলে বলতে পারেন না। তাঁর চিকিৎসা প্রয়োজন। স্থানীয়রা মাঝেমধ্যে রুমাকে খাবার দিলে, তিনি খুব তৃপ্তি নিয়ে খান।’

ঝিনাইগাতী সদরের ইউপি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুল হক মনির বলেন, ‘চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি ইমরান হাসান রাব্বীর পরামর্শে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর সদস্যরা নিয়মিত ওই নারীর বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। আপাতত তাঁকে খাবার ও শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁর পরিচয়ের বিষয়ে শুধু রুমা বাদে আর কিছুই বলতে পারেন না। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা ইতোমধ্যে ফেসবুকে রুমার ছবিসহ পরিচয় জানতে চেয়ে পোস্ট করেছেন। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা তাঁর পরিবারের খোঁজ বের করতে পারব।’

ঝিনাইগাতী উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আল আমীন বলেন, ‘এই নারীর পরিচয় অজ্ঞাত। তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী। তাঁর স্বজনদের পাওয়া গেলে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বলেন, ‘এই নারীর ঠিকানা ও স্বজনদের খোঁজা হচ্ছে। আমরা আশা করছি দ্রুতই স্বজনদের পাব।’

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।