
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রায় সব আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে পুরোদমে প্রচারণ চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এবারই প্রথমবারের মতো বেশ কিছু সংখ্যাক জামায়াত নেতাদের সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে নির্বাচনি মাঠে নামিয়েছে দলটি।
যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, স্বজন বিবেচনায় নয়, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা দেখেই তাদেরকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এই তালিকায় রয়েছেন দলটির সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলেসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়া বেশ কিছু নেতার নিকটাত্মীয়ও জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন
পাবনা-১ (সাঁথিয়া) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও সাবেক কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী প্রয়াত মাওলানা মতিউর রহমানের বড় ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন। সাঁথিয়া উপজেলা নিজামীর নিজ এলাকা হওয়ায় এখানে জামায়াতের প্রচুর নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। ফলে সাঁথিয়াকে একক আসন করায় ফুরফুরে মেজাজে জামায়াতে ইসলামী।
চার ভাই দুই বোনের মধ্যে নাজিব মোমেন দ্বিতীয়। বড় ভাই ড. নাকিবুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। দ্বিতীয় যমজ ভাই ডা. নাঈম খালেদ যুক্তরাজ্যে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ছোট ভাই নাদিম তালহা তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বড় বোন ড. মহসিনা ফাতেমা মালেয়েশিয়া ও ছোটবোন খাদিজা তাহেরা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
নাজিব মোমেন লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিয়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের জুনিয়র হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন। ওই বছর তিনি জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১৩ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ওই সময় থেকে ট্রাইব্যুনালে ও উচ্চ আদালতে জামায়াতের আইনজীবী টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করেন নাজিব মোমেন।
২০১৬ সালের ১০ মে মধ্যরাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার বাবা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এসময় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো শুরু করে শেখ হাসিনার সরকার।
এসময় দলীয় সিদ্ধান্তে ইংল্যান্ডে চলে যান নাজিব মোমেন। তখন থেকে দেশটির আদালতে আইন প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং একইসঙ্গে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরিতে ভূমিকা পালন করেন।
পিরোজপুরের দুই আসনে আল্লামা সাঈদীর দুই পুত্র
পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি ও নাজিরপুর) আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন দলের সাবেক নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ছোট ছেলে আল্লামা মাসুদ সাঈদী। তিনি পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেন।
পিরোজপুর-১ আসন সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৬৩ জন। আসনটিতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুধাংশু শেখর হালদারকে হারিয়ে এমপি হন জামায়াতের মরহুম নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে এই আসনে আবারও জয় পান মাওলানা সাইদী।
পিরোজপুর-২ (নেছারাবাদ, কাউখালী ও ভান্ডারিয়া) জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রখ্যাত এই আসলামি বক্তার মেজো ছেলে ও সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তিনি নেছারাবাদ, কাউখালী ও ভান্ডারিয়া আসনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট ‘জুলাই দিবস’ উপলক্ষে নেছারাবাদ, কাউখালী ও ভান্ডারিয়ায় হাজার হাজার নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটিয়ে শোডাউন করেন শামীম সাঈদী, যা সবার দৃষ্টি কাড়ে। এছাড়া নেছারাবাদে নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনের জন্য কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌ-র্যালি করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। এছাড়া তিনি রুটিন মাফিক পিরোজপুর-২ আসনের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচনি কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ,কর্মীসভা,ভোট কেন্দ্র প্রতিনিধি সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড ও জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
এমনকি শামীম সাঈদীর অবর্তমানে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমানভাবে প্রচারণার ধারা অব্যাহত রেখে নির্বাচনি মাঠ নিজেদের দখলে রেখেছেন।
মীর কাসেম আলীর পুত্র ব্যারিস্টার আরমান
ঢাকা-১৪ আসন থেকে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমান। দীর্ঘ আট বছর তাকে গুম করে রাখা হয়েছিল অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মুক্ত হয়ে জামায়াত আমিরের আহ্বানে মিরপুর-১৪ আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
আরমানের বাবা মীর কাসেম আলী জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। তাকে জামায়াতের আর্থিক উইংয়ের থিঙ্কট্যাংক ধরা হতো। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার ফাঁসি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। বিদেশে সেটেল ব্যারিস্টার আরমান বাবার মামলায় লড়তে দেশে এসে গুমের শিকার হন।
রাজধানীর দারুস সালাম, শাহ আলী থানা, মিরপুর থানার আংশিক এবং সাভারের কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসন। সাড়ে চার লাখ ভোটারের এ আসনে গত এক বছর নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ব্যারিস্টার আরমান। কাউন্দিয়া, বনগাঁও এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড) তার ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ নানা দৃষ্টিনন্দন কর্মসূচি করছেন জামায়াতের এই প্রার্থী।
পাবনা সদরে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস সোবহান পুত্র নেসার আহমেদ নান্নু
পাবনা-৫ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন জামায়াতের মরহুম নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা আবদুস সোবহানের ছেলে নেসার আহমেদ নান্নু। যদিও সেখানে জামায়াত থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে জেলা নায়েবে আমির মাওলানা ইকবালকে।
কিন্তু এই আসনটি বাবার পূর্ব পরিচিতির কারণে নেসার আহমেদ নান্নুরও বেশ পরিচিতি রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী তাকে মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে তিনি লড়াই করবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র: ঢাকা মেইল









































