
জামায়াতের মূল আস্তানা হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া। এই দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থকের পাশাপাশি ভোটার রয়েছে দলটির। চোখে পড়ার মতো রয়েছে দাপটও। আসনটি থেকে তিন দফায় জয়লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জামায়াত প্রার্থী। ফলে এটাকে জয়ের জন্য তুলনামূলক সহজ ও ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’র আসন বলে মনে করেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
বিপরীতে এখানে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, তার ওপর দলটির নেতাকর্মীরা চারটি গ্রুপে বিভক্ত। এমন বিভক্তি ও দলাদলির কারণে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারছে না দলটি। তবে এবার জামায়াতকে ঠেকাতে মরিয়া বিএনপি। খোদ দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনায় ঐক্যবদ্ধ দলটির চার গ্রুপ।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়, সেটা মেনে নিয়ে তার পক্ষে প্রার্থী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন চার গ্রুপে বিভক্ত নেতাকর্মীরা। এ জন্য তারা অন্তর্কোন্দল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। বিষয়টি নির্বাচনী এলাকার মানুষ ও দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের জানান দিতে ‘ঐক্যের মিলনমেলার’ আয়োজন করেছেন গ্রুপগুলোর নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপি নেতারা।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে দলের প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে রেখেছে জামায়াত। চট্টগ্রাম-১৫ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীকে। নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন তিনি। সম্ভাবনাময়ের তালিকায় রেখে আসনটিতে তুলনামূলক বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে তারাও বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বিদ্যমান রাজনৈতিক এই বিরোধের জেরে জামায়াতের মূল অবস্থানকে নড়বড়ে করে দিয়ে আসনটি কবজায় নিতে চায় বিএনপি। এ জন্য প্রথমে দলের কোন্দল নিরসন করে নেতাকর্মীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে চাইছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে সেখানে দলের যে চারটি গ্রুপ রয়েছে, সেগুলোকে দলাদলি থেকে বের করে আনা হয়েছে। চার গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির এক নম্বর সদস্য অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান ও সদস্য শেফায়েত উল্লাহ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিষয়টি সমন্বয় করেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। দফায় দফায় বৈঠক করে এই চার নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করেন তিনি।
দলীয় ঐক্যের ব্যাপারে বিএনপি নেতা অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশনায় সব ভেদাভেদ ও বিভক্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। দলের বৃহত্তর স্বার্থে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় গড়ে ওঠা ঐক্য আমরা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে চাই। বিএনপি নেতা জামাল হোসেন বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নেতায় নেতায় যে মতভিন্নতা ছিল, তা কেটে গেছে। এখন থেকে অন্যরকম এক বিএনপিকে দেখবে মানুষ।
মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, এক সময় আমাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও আমরা এসব ভুলে দলের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করব। এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সভা-সমাবেশ করছি। ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করে দেব, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অন্য কোনো দলের নয়, বিএনপিরই ঘাঁটি। বিএনপি নেতা শেফায়েত উল্লাহ বলেন, বিভক্ত নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় এখন অন্য যে কোনো দলের তুলনায় আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী। এই ঐক্য ধরে রাখতে চাই। এটা হলে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।
আসনটিতে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী ঘনিষ্ঠ সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া যে জামায়াতের দুর্গ, সেটি প্রমাণিত সত্য। এখানকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে এ দল ছিল। সেই মানুষগুলোর সমর্থনও পাবে জামায়াত।
১৯৯১ সালে এ আসনে তৎকালীন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে হারিয়ে জয়লাভ করেন জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা শাহজাহান চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির তৎকালীন নেতা ও বর্তমানে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। ২০০১ সালে অলিকে হারিয়ে ফের জয় পান শাহজাহান চৌধুরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও অলিকে হারিয়ে জয়ী হন জামায়াতের আরেক প্রভাবশালী নেতা বর্তমানে দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
সূত্র: সমকাল