প্রচ্ছদ জাতীয় নির্বাক চোখে মা বাবা ভাই হারানোর বেদনা

নির্বাক চোখে মা বাবা ভাই হারানোর বেদনা

দুনিয়াটা ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। নির্যাতিত নির্বাসিত হয়ে প্রবাস জীবণে থাকায় হারিয়েছেন ভাইকে। হাসিনা সরকার অংশগ্রহণ করতে দেয়নি ভাইয়ের জানাযায়। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশে মঙ্গলবার ‘আপসহীন নেত্রী’,‘ঐক্যের প্রতীক’সেই মাকেও হারিয়েছেন তিনি। বলছি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা। একদিন আগেও যাকে দেখা গেছে হাস্যোজ্জ্বল চোখে গতকাল তাকে দেখা গেছে নির্বাক-বিমর্ষ এক অসহায় দৃষ্টিতে। হয়তো স্মৃতিপটে ভাসছে মাকে নিয়ে শত-সহস্র ঘটনা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের একটি ভিডিও চিত্রে তাকে এই দৃশ্যেপটে দেখা গেছে। বৈঠকে তিনি কোনো কথা বলেছেন না। বিমর্ষ ও চুপচাপ বসে রয়েছেন। একেবারের পাথরের মতো শক্ত হয়ে। শুধু তারেক রহমানকে নয় দলের অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও শোকে কান্নায় নীরবতায় দেখা গেছে। মির্জা আব্বা এবং ডা. এজেড এম জাহিদ বার বার চোখ মুছছেন। ছোট ভিডিও ক্লিপটি বিকেল থেকেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে বাবা জিয়াউর রহমান, ভাই আরাফাত রহমান কোকোর ঘটনাগুলোও স্মরণ করছেন।

খালেদা জিয়ার বিদায় পরবর্তী সেই শোক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে বৈঠকে দেখা যায়নি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদকে। দলের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছেন তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন।

২০২৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। দিনটি শুধু তারেক রহমানের জন্য নয় বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় একটি গভীর শোকের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শীতের কুয়াশাভেজা ভোর তখনো কাটেনি, ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৬টা। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝে নিভে গেল বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, এবং কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন বেগম খালেদা জিয়ার জীবন। তাঁর এই মহাপ্রয়াণে কেবল একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তিই ঘটেনি, বরং বাংলাদেশ হারালো তার এক ‘আপসহীন নেত্রী’কে, যিনি আজীবন মাথা নত না করার দীক্ষায় জাতিকে উজ্জীবিত করেছেন।তিনি ছিলেন ঐক্যের প্রতীক, শক্তির উৎস। তাঁর মৃত্যুতে শুধু তার দলই নয়, দেশের পুরো রাজনৈতিক অঙ্গন এক বড় ক্ষতির মুখে পড়ল বলে অনেকেই মনে করছেন। যিনি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একাই লড়েছেন বাংলাদেশর হয়ে।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তারেক রহমান জানিয়েছেন, আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য। আজীবন লড়েছেন স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে; নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। আমার মা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ( মঙ্গলবার) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আমার মা নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য। আজীবন লড়েছেন স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে; নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। ত্যাগ ও সংগ্রামে ভাস্বর হয়েও, তিনি ছিলেন পরিবারের সত্যিকারের অভিভাবক; এমন একজন আলোকবর্তিকা যার অপরিসীম ভালোবাসা আমাদের সবচেয়ে কঠিন সময়েও শক্তি ও প্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সর্বোচ্চ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবুও যন্ত্রণা, একাকিত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকেও তিনি অদম্য সাহস, সহানুভ‚তি ও দেশপ্রেম সঞ্চার করেছিলেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে।

দেশের জন্য তিনি হারিয়েছেন স্বামী, হারিয়েছেন সন্তান উল্লেখ করে তারেক রহমান লেখেন, তাই এই দেশ, এই দেশের মানুষই ছিল তার পরিবার, তার সত্তা, তার অস্তিত্ব। তিনি রেখে গেছেন জনসেবা, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিক্রমায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আপনারা সবাই আমার মা’র জন্য দোয়া করবেন। তার প্রতি দেশবাসীর আবেগ, ভালোবাসা ও বৈশ্বিক শ্রদ্ধায় আমি ও আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ।