‘মা, দোয়া করো। আমরা মুক্ত হয়েছি। এখন নৌবাহিনীর লোকজন আমাদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার জন্য, আমার সঙ্গে থাকা সবার জন্য দোয়া করো। যেন দ্রুতই দেশে পৌঁছাতে পারি।’
৩১ দিন পর ২৩ নাবিকসহ জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। মুক্ত হওয়ার পর রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাড়িতে মায়ের কাছে ফোন করে কথাগুলো বলছিলেন জাহাজটির এবিল সি-ম্যান (নাবিক) মোহাম্মদ সাজ্জাদ।
দীর্ঘ একমাস পর ছেলের ফোন পেয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন মা শামসাদ বেগম। পরিবারের সবাইকে ডেকে কথাটি জানিয়ে দেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই সাজ্জাদের পরিবারে বইতে শুরু করে খুশির বন্যা।
সাজ্জাদের মা শামসাদ বেগম বলেন, আমার ছেলে আমার বুকে ফিরে আসবে, আমার আর কিছু দরকার নাই। আমার মনটা শান্ত হয়ে গেল।
সাজ্জাদ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর গ্রামের গাজু মিয়ার ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সাজ্জাদ তৃতীয়। ১০ বছর ধরে জাহাজে কর্মরত রয়েছেন তিন। প্রথমে ডেক ইনচার্জ থাকলেও বছরখানেক আগে তার পদোন্নতি হয়।
স্বজনরা জানান, পদোন্নতির পর বিয়ে ঠিক হয় সাজ্জাদের। এবার জাহাজে ওঠার এক দিন আগে খালাতো বোন নাজমিন আক্তারের সঙ্গে সাজ্জাদের কাবিন সম্পন্ন হয়। সাজ্জাদ বাড়ি ফিরলে ঘটা করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এরপর তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়।
৩১ দিন পর শনিবার বিকেলে মুক্তিপণের অর্থ পেয়ে জাহাজটি ত্যাগ করে দস্যুরা। এরপর মধ্যরাতে ২৩ নাবিক নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। আগামী ১৯-২০ এপ্রিল জাহাজটি সেখানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ কেএসআরএম।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের বারিক বিল্ডিং মোড়ের কেএসআরএম ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে কেএসআরএম-এর সিইও মেহেরুল করিম বলেন, জাহাজটি দখলে নেয়ার পর আমরা জাহাজের লোকেশন ট্র্যাক করতে থাকি। যোগাযোগ শুরুর পর প্রতিদিনই কথা হচ্ছিল। নাবিকরা কেমন আছে, কত তাড়াতাড়ি দস্যুরা জাহাজ ছেড়ে যাবে ইত্যাদি কথা হতো। দুদিন আগে আমাদের দাবি ছিল- তাই প্রত্যেক নাবিকের ভিডিও নিয়েছি। মুক্তিপণের প্রতিটি কাজ আইনগতভাবে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ ভোর তিনটায় কথা হয় ক্যাপ্টেনের সঙ্গে। জলদস্যুরা ৬৫ জন ছিল। বোটে করে তারা চলে যায়। নাবিকদের অপশন আছে ফ্লাইটে আসা কিংবা জাহাজে আসা। জাহাজটি দুবাই থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসব।
এর আগে, ২০১০ সালে জলদস্যুর কবলে পড়ে একই গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি জাহান মণি। তিন মাস পর মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ফিরিয়ে আনে তারা।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |