প্রচ্ছদ রাজনীতি দ্বাদশ নির্বাচন, আওয়ামী লীগ-স্বতন্ত্র প্রার্থী-জাতীয় পার্টি ও বিএনপি-জামায়াত

দ্বাদশ নির্বাচন, আওয়ামী লীগ-স্বতন্ত্র প্রার্থী-জাতীয় পার্টি ও বিএনপি-জামায়াত

রাজনীতি : সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের যাত্রা সুনিশ্চিত করতে জরুরি দরকার এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত না থাকলেও গণতন্ত্র, রাষ্ট্র ও দেশ চালানোর সবচেয়ে ভালো পন্থা কিনা সে বিষয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক আছে। আমি গণতন্ত্রের বিরাট কোনো ভক্ত নই, কিন্তু তার মানে এটাও নয় আমি স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে। কিন্তু একটি দেশের ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট দেবে এবং সেই ৪০ শতাংশের মধ্যে ৫১ শতাংশের পছন্দ করা একটি দল রাষ্ট্র চালাবে-

সেটি খুব গ্রহণযোগ্য পন্থা, এটি আমি মনে করি না। প্রথমত ৬০ শতাংশ মানুষ ভোটই দিলো না, যারা হয়তো বিজিত দলের সমর্থক ছিলো। যাই হোক। সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকা, ভারত ও ইসরায়েলের নির্বাচিত সরকাররা সারা দুনিয়াটাকে কীভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে সেটা আমরা দেখছি প্রতিনিয়ত। গণতন্ত্রের আব্বা রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক রাষ্ট্র চালাচ্ছেন শূন্যস্থান পূরণ করে, পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রীর জায়গায়, ভোট

হলে তিনি গো হারা হারবেন, এমনটিও বলা হয়ে থাকে। ঋষি সুনাক দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন বরিস জনসনের জায়গায়, যাকে বলা হয় টনি ব্লেয়ারের পর সবচেয়ে ‘dznamic’ প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যের যেকোনো মানুষ বলবে বরিস জনসন তাদের জন্য সেরা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু একটি উদ্ভট পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক নিয়মনীতির কারণে তার জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসে ঋষি সুনাক, আমেরিকার অন্ধ অনুকরণ ছাড়া যার নেতৃত্বগুণ বলতে কিছু আছে কিনা প্রশ্নবিদ্ধ।

অন্যদিকে গণতন্ত্র ছাড়াই পৃথিবীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধানতম শক্তি চায়না ও রাশিয়া। ভোট দেয়া মাত্র ৪০ শতাংশের মধ্যে ৫১ শতাংশের মতো ছাড়াই তারা তাদের দেশকে বিশ্বের শীর্ষে নিয়ে গেছে। আমার ধারণা আগামী ২০ বছরের মধ্যে গণতন্ত্র একটি মৃতপ্রায় প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। একটি কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, অফিস, এমনকি পাড়ার মোড়ের দোকানের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় যোগ্যতার ভিত্তিতে-

সেখানে একটা আপাদমস্ত রাষ্ট্রের নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে ১০ কোটি মানুষের ‘মনের ইচ্ছায়’Ñ এই ব্যবস্থা কলোনিয়ালিজমের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মাথার মধ্যে গেঁথে দিলেও, এটি আসলে কতোটা কার্যকরী সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন করাকেও স্বৈরতন্ত্র বিবেচনা করার যে কূটকৌশল- সেটি থেকে বোঝা যায় এটিকে প্রতিষ্ঠিত করে কলোনিয়ালিস্ট রাষ্ট্রগুলো কতোটা সুবিধাভোগী হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকাসহ সারাবিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ের রাষ্ট্রগুলো গণতন্ত্রের অভাবের নামে কতো দেশ আক্রমণ করেছে এবং সেসব দেশের মানুষের হাতে তাদের দেশ চালানোর তথা ভোট দেবার ক্ষমতা নেই- এই বুলি তুলে দেশগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে- সেটি চিন্তা করলেই বিষয়টি বোঝা যায়।

পর পর একাধিক নির্বাচনে বিএনপি জোটের না আসাটা দুঃখজনক বলে আমি মনে করি। গণতন্ত্র যে একটি অকার্যকর পন্থা তার একটা বড় উদাহরণ বিএনপি-জোটের সমর্থন। জাতির জনককে হত্যার পর সেনানিবাসে জন্ম নেওয়া বিএনপি এবং বাংলাদেশের বিরোধিতা করা জামায়াতে ইসলামীর যে বিপুল জনপ্রিয়তা, সেটাই প্রমাণ করে গণতান্ত্রিক পন্থা মানুষের মনের ইচ্ছার প্রতিফলন করতেই পারে। কিন্তু সেটা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ভালো নাও হতে পারে। যদি ধরেও নিই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সব নির্বাচন নিয়ন্ত্রিত। তবুও বিএনপি নির্বাচনে আসলে তার নেতা-কর্মীরা উৎসাহিত হতো, নির্বাচনের মাঠ শরগরম হতো এবং পুলিশ-আর্মি-প্রশাসন কোনো ধরনের ‘ফেভার’ কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের প্রার্থীদের দিতে দ্বিধান্বিত হতো। নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনেকসময় নির্বাচনের খেলা পাল্টে দেয়, এমন শত শত নিদর্শন আছে বিশ্বব্যাপী। তাছাড়া এভাবে ক্রমাগত নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি জোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনিচ্ছারও প্রতিফলন, তারা নিজের অজান্তেই বিপুল সংখ্যক নতুন ভোটারদের সমর্থন হারাচ্ছে বলে আমি মনে করি।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালে বাধা তো দেওয়া হচ্ছেই না, বরঞ্চ তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমি মনে করি এটি এ নির্বাচনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসলে তারা হয়তো অনেক আসনে জিততো, কিন্তু তাদের প্রায় সকল প্রার্থী এতোটাই খারাপ এবং বাংলাদেশ বিরোধী যে সেটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক হতো না। অন্যদিকে, তারা না থাকার ফলে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র শাসনের বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে যে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ- সেটির প্রতিবাদ করার সুযোগ মানুষ পেতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার মাধ্যমে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি সংখ্যায় জিতলে তিনটি জিনিস হবে : ১. আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যা ইচ্ছা তাই করে পার পাবে, সেই ধারণা থেকে দল সরে আসবে। ২. মানুষ যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের কাজ পছন্দ করছে না সেটি প্রমাণিত হবে এবং যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন। ৩. আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হারবে। কিন্তু অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী অর্থাৎ অযোগ্য ও রাষ্ট্রবিরোধী পাকিস্থানপন্থীরাও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২০০১ সালে আমরা দেখেছি কীভাবে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিএনপি মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েকটি সংসদে ব্যর্থ ও অযোগ্য মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। আশা করবো এবার তিনি এমন একটি সংসদ সাজাবেন যেখানে যোগ্য মানুষরা মানুষকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। প্রধানমন্ত্রী ও তার উপদেষ্টাদের ক্যারিশমায় যে বৃহৎ উন্নয়নগুলো করার ছিলো, তার বেশিরভাগই সম্পন্ন হয়েছে বা সম্পন্ন হবার পথে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে স্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্টের বুলি দিয়ে নির্বাচনে জেতা যাবে না। তাই এটি শেখ হাসিনার সম্ভবত শেষ সুযোগ দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে আবার জনপ্রিয় করার। আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৩ এর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিন। যাকে ইচ্ছা তাকে দিন। নৌকায় দিন অথবা আওয়ামী লীগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিন। নৌকা, ঈগল বা অন্য যে কেউ নির্বাচিত হোক সেটি ধানের শীষ কিংবা দাঁড়িপাল্লার চাইতে হাজার গুণে ভালো হবে দেশের জন্য, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জয় বাংলা। জয় শেখ হাসিনা। জয় বঙ্গবন্ধু। লেখক: গবেষক

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।