দেশজুড়ে : দুই লাখ টাকা দাও, ৫০০ পিস দিয়ে মামলা দেব।’ ‘স্যার, ১০০ পিস দেন। দুই লাখ টাকাও নেবেন, আবার ৫০০ পিস দেবেন! স্যার আমার বোন লাগলে বের হয়ে এসে আপনারে খুশি (টাকা দিয়ে) করব। জানেন না হেয় কী রকম,
আপনি চাইলে কি আপনারে দেবে না?’ ‘তোমার ১ হাজার, ওই মহিলাকে ৩০০ পিস। সঙ্গে ১০০ গ্রাম দিয়ে মামলা দেব। ওসিই প্যারা দিচ্ছে আমারে। হেয় কয় তুইয়ো অর্ধেক খা, আমি তো খামুই। এহা খামু ক্যা, টিম সবাই আছে না! এত সহজ…, ভাগ করতে করতে আমি পাব পাঁচ ভাগের এক ভাগ।’
উল্লিখিত কথোপকথনটি রাজধানীর পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ারুল ইসলাম এবং চিহ্নিত মাদক কারবারি ফাতেমা বেগম ওরফে ফতের দুই বোনের মধ্যকার। তাদের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড হাতে এসেছে। অডিও রেকর্ডের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়,
বৃহস্পতিবার এসআই আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে পল্লবী থানার একটি দল অভিযান চালিয়ে স্থানীয় চিহ্নিত মাদক কারবারি ফাতেমা বেগম ওরফে ফতে এবং তার সেলসম্যান হিসেবে পরিচিত রেজিয়া বেগমকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের থানা হাজতে আটক করে খবর দেওয়া হয় ফাতেমার দুই বোন হোসনেয়ারা ও পাতিয়াকে।
এরপর তাদের কাছে ৪ হাজার পিস ইয়াবা ৫০০ পিস বানাতে দাবি করা হয় ৩ লাখ টাকা। পরে তারা ২ লাখ টাকায় রাজি হন। এরপর মাদক কারবারি ফাতেমার বোনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়। মামলা নং-২০, তারিখ ১৯-১-২৪।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী, কারও কাছে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত ইয়াবা পাওয়া গেলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। অন্যদিকে ইয়াবার পরিমাণ ৪০০ গ্রাম বা তার বেশি হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। ৪ হাজার পিস ইয়াবার ওজন সাধারণত ৪০০ গ্রাম হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এসআই আনোয়ারুল ইসলাম ২ লাখ টাকা আর্থিক সুবিধা নিয়ে এক চিহ্নিত মাদক কারবারিকে বাঁচাতে পরিমাণ কম দেখিয়েছেন।
জানতে চাইলে মাদক কারবারি ফাতেমার বোন পাতিয়া বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমার বোন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় এসআই আনোয়ার তাকে এই দিকে আয় বলে ডেকে নেয়। পরে আমার বোন যায়, আমার বোনের সঙ্গে এসআইয়ের আগে থেকেই জানাশোনা ছিল। পরে তাকে একটি বাসার রুমে ডেকে নিয়ে রুমে তল্লাশি করে ৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এরপর বলা হয়, এই ইয়াবা তার। তখন আমার বোন অস্বীকার করলেও তাকে জোর করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তারা আমাদের থানায় ডেকে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। পরে আমার বোন হোসনেয়ারা ২ লাখ টাকা দেয়।’
আপনার বোনের সঙ্গে এসআইয়ের পরিচয় কীভাবে জানতে চাইলে পাতিয়া বলেন, ‘আসলে আমার বোন গাঁজা বেচত। যে কারণে এসআই আনোয়ার মাঝেমধ্যেই এসে টাকা নিত।’ তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এসআই আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের মাদক সহকারে গ্রেপ্তার করেছি। ৫০০ পিস ইয়াবা সহকারে পেয়েছি, মামলা দিয়েছি। দু-একজন মহিলা আসছিল। আমি মামলা লেখার তালে ছিলাম, কে কী বলছে জানি না।’ কিন্তু অডিওতে কণ্ঠ তো আপনার—এমন কথা বলার পর এসআই বলেন, ‘ভয়েস তো থাকতেই পারে। ওরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলতেছে, এখন কোন কথা কোনদিক দিয়ে উঠছে ওরাই জানে।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘আমার নলেজে নাই এই বিষয়টি। আমার নলেজে আছে, দুজনকে ধরছে। ও হলো আমাদের পল্লবীর একজন বিখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। ওকে ধরছে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ, মামলা দিছে। তবে যদি এরকম হয়ে থাকে, তাহলে ও (পুলিশ কর্মকর্তা) আইনের আওতায় আসবে।’ অডিওর কথোপকথনে টাকা লেনদেনে তিনিও জড়িত, সেটি অস্বীকার করেন ওসি অপূর্ব হাসান।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |