
নির্বাচনের আগে জোটের হিসাব-নিকেশে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা। কে কার সঙ্গে জোট করবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনার ঝড়।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–কে সঙ্গে পেতে মরিয়া দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সম্প্রতি ফিনান্সিয়াল টাইমস–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “গণতন্ত্রকামী যে কোনো দলের সঙ্গে সরকার গঠনে প্রস্তুত বিএনপি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে এনসিপির সঙ্গে জোট বা অন্তত নির্বাচনী সমঝোতা গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে এনসিপির সঙ্গেও সংস্কারভিত্তিক আলোচনা চলছে। তবে এখনো নির্বাচনে কোনো সমঝোতা হয়নি। নির্বাচন সামনে এলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। এনসিপির সঙ্গেও সমঝোতা হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি আসন ভাগাভাগিতে এনসিপির দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তারেক রহমানের বক্তব্য সেই দিকেই ইঙ্গিত বহন করে।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশও গণঅভ্যুত্থানের আবেগকে ভোটের মাঠে কাজে লাগাতে এনসিপির সঙ্গে অন্তত নির্বাচনী সমঝোতা করতে আগ্রহী। এনসিপি সূত্র জানায়, জামায়াত আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রত্যাশিত সংখ্যক আসন ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং নির্বাচনী সহায়তাও দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে।
তবে এনসিপির ভেতরে এ নিয়ে দ্বিধা রয়েছে। কারণ, জামায়াতের সঙ্গে গেলে ‘ডানপন্থী’ ট্যাগের আশঙ্কা দেখা দেবে বলে মনে করছেন দলের একাংশ। অপরদিকে বিএনপি পাশে থাকলেও প্রত্যাশিত সংখ্যক আসন দিতে রাজি নয়, ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দলটি এখনও সময় নিচ্ছে।
এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমকে বলেন, “আসন্ন নির্বাচনে জোট গঠন নিয়ে আমাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। গত মাসে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়াগলম পরোয়ার বনশ্রীর তার বাসায় গিয়ে যুগপথ আন্দোলনে এনসিপিকে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন। তবে নাহিদ ইসলাম এতে সাড়া না দিয়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন।”
তিনি আরও জানান, এনসিপি ৫০ থেকে ৬০টি আসনের প্রস্তাব পেলে জোটে যোগদানের বিষয়ে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে।
সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগে বিএনপি–এনসিপি সমঝোতা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। জোট রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হলে তা ভোটের মাঠে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
সূত্র: জনকণ্ঠ













































