জাতীয়: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার দুর্বার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
শেখ হাসিনা এরপর থেকে ভারতেই অবস্থান করছেন। ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে ভয়েস অব আমেরিকা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি দৃশ্যমান টানাপড়েন লক্ষ করা যাচ্ছে।
বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে ইউনূস জানান, এটি একটি আইনগত বিষয় এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে। প্রধান উপদেষ্টা ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের দুজনেরই দুই দেশেরই স্বার্থ হলো যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা। মাঝে মাঝে কতগুলা প্রশ্ন এসে যায় যেখানে সম্পর্কে একটু চির ধরে। যেমন সীমান্তে গুলি করল, বাচ্চা মেয়ে মারা গেল, বাচ্চা ছেলে মারা গেল, এগুলো মনে কষ্ট দেয়। এটাতে আমরা মনে করি না যে সরকার ইচ্ছা করে, ভারতের সরকার ইচ্ছা করে এসব করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব কারণে এসব ঘটে, সেই কারণগুলো যেন আমরা উৎখাত করতে পারি, যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, যাতে নিরাপদে মানুষ জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাই দেশ চালাচ্ছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘চালানো উচিত বলছি। চালাচ্ছে বলছি না। চালানো উচিত। তরুণদের হাতে ছেড়ে দেওয়া, আমি বরাবরই বলে এসছি, এখানে এ দায়িত্ব পালন করার আগে থেকেই বলছি যে তরুণদের হাতে, কারণ তারাই তাদের ভবিষ্যৎ রচনা করবে।’ সেনাবাহিনীর কমিশন অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনুস বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রদের হত্যা করাসহ পুলিশের গণবিরোধী ভূমিকায় জনগণের মধ্যে পুলিশের ব্যাপারে যে নেতিবাচক অনুভূতি তৈরি হয়, সে কারণে গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়। পুলিশকে দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছিল না। এ কাজে আনসার নিয়োগ করেও ফল আসেনি। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে পুলিশ হত্যার ঘটনার তদন্ত বিচার করা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যে যেখানে অপরাধ করেছে, তার বিচার করা হবে। তা না হলে তো বিচার সম্পন্ন হবে না।’ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এই বৈঠক হয়েছে সার্কভুক্ত একটি দেশ হিসেবে। ‘তার মানে এই নয় যে সব কিছু পাল্টে গেছে। দেশের সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আগের সরকার সব ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সেখান থেকে পুনর্জাগরণ করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা কমিশন গঠন করছি। ছয়টি করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি সংবিধান নিয়ে। আরো কমিশন আসছে। বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য সংস্কারের পর নির্বাচন দেওয়া এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।’
সূত্র : যুগান্তর
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |