প্রচ্ছদ জাতীয় গুম অবস্থায় ভারতের কারাগারে যাওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা সুখরঞ্জন বালির

গুম অবস্থায় ভারতের কারাগারে যাওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা সুখরঞ্জন বালির

হাসিনার আমলে গুমের অনেক ঘটনার মধ্যে সুখরঞ্জন বালিও একজন ভুক্তভোগী। যার কাহিনীটি অন্য সবার থেকে আলাদা। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিপক্ষে সাক্ষী না দেয়ায় ছয় বছর ভারতের কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাতে হয়েছে তাকে। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়া সুখরঞ্জন বালি কীভাবে ভারতের কারাগারে পৌঁছান, ভয়াবহ বর্ণনা জানান নিজেই।

পিরোজপুর জেলার ছোট্ট এক গ্রাম উমিদপুর। জন্মের পর থেকে এখানেই থাকেন ৭২ বছর বয়সী সুখরঞ্জন বালি। নিজ চোখে দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ, দেখেছেন পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে নিজ ভাইয়ের নির্মম হত্যা।

২০১২ সালে দেশে শুরু হয় মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার। যেখানে একজন অভিযুক্ত ছিলেন জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদী। নিজ ভাইয়ের হত্যায় সেই সাইদীর বিরুদ্ধেই সুখরঞ্জনকে সাক্ষ্য দিতে চাপ দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, আমি সেই সময় হুজুরকে দেখিনি। আমার ভাইকে হত্যার সঙ্গে দেলোয়ার হোসেন সাইদী জড়িত নয়। তখন অফিসাররা বলছেন যে রাজসাক্ষী এনেছেন তিনি যা বলে তাতে সব জিরো। এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে মারা শুরু করছে।

এরপরের ঘটনা সবারই জানা। সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর আদালতের বারান্দা থেকেই সুখরঞ্জনকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের কিছু লোক।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, আমাকে টানতে টানতে ২০-২৫ হাত দূরে নিয়ে যায়। পরে আমার মুখ আটকে ফেলে। আমাকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ আর সাদা পোশাকধারীরা।

সেসব দিনের কথা মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন সুখরঞ্জন বালি। তার জবানেই উঠে আসে দরজা-জানালা বিহীন অন্ধকার ঘরে তার দুঃসময়ের দিনলিপি।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, আমাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখান থেকে দিন হয়েছে নাকি রাত হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি। চারদিকে ক্যামেরা ছিল, আর সামনে টাকা দিয়েছিলো আর বলেছিলো এই টাকাগুলো নিয়ে হুজুরের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে। তখন আমি বলেছি, যাকে আমি দেখিনি, শুনিনি তার বিরুদ্ধে কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। এভাবে ২৫ দিন টাকা দেখায় ইলেকট্রিক শক দিয়েছে।

একটা সময় ছাড়া পান সুখরঞ্জন। তা ছিল শুধুই পরের বিপর্যয়ের শুরু। চোখ বেধে গাড়িতে তুলে তাকে নামানো হয় ভারতীয় সীমান্তে। দুজন বিজিবি সদস্যের উপস্থিতিতে জোর করে তুলে দেয়া হয় বিএসএফের হাতে।

তিনি আরও বলেন, চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলেছে। সকালে গাড়িতে তুলেছে সারাদিন গাড়ি চালিয়েছে। তবে যেখানে গাড়ি থামিয়েছে সেটা বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত। পরে আমাকে টানতে টানতে বিএসএফয়ের হাতে তুলে দেয়। পরে তারা আমাকে মারধর করে। পরে আমাকে তারা বলেন, সামনে হাঁটেতে। তখন তাদের বলেছি, আমি কি হাঁটবো আমাকে আপনারা মেরে ফেলেন আমার এই কষ্ট সহ্য হয় না।

এরপর ২২ দিনের জন্য তার ঠিকানা হয় ভারতের বশিরহাট কারাগারে। পরের প্রায় ৫ বছর দমদম জেলে।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, আমাকে রাতে ওখানকার একটা থানায় নিয়ে যায় পরে বশিরহাট কোর্ট বা জেলে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে ২২ দিনের দিন দমদম কারাগারে নিয়ে যায়। সেখানে ছিলাম ৫ বছর।

২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় ছাড়া পান সুখরঞ্জন বালি। এরপর ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশেই কাটিয়েছেন পলাতক জীবন। এখন উমিদপুর গ্রামের ছোট্ট ভাঙ্গা ঘরই তার আশ্রয়।

সূত্র : চ্যানেল২৪

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।