প্রচ্ছদ সারাদেশ খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান মারা গেল কেন, পরিবার যা বলছে

খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান মারা গেল কেন, পরিবার যা বলছে

দেশজুড়ে : “নামি-দামি অনেকেই ইউনাইটেড মেডিকেলে স্বাস্থ্যসেবা নেয়। সেজন্য কিছু টাকা বেশি গেলেও ছেলেটার খতনা নিরাপদে হবে, এই বিশ্বাস থেকেই ওখানে গিয়েছিলাম। অথচ ছেলেটা আমার লাশ হয়ে ফিরলো।”

আক্ষেপ করে বলছিলেন শিশু আয়ানের বাবার শামীম আহমেদ। একমাত্র ছেলে আয়ান আহমেদকে খতনা করানোর জন্য গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকার সাতারকুলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান মি. আহমেদ।

সেখানে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী শিশুটির। ভুল চিকিৎসা ও হাসপাতালের অবহেলার কারণেই আয়ানের অকালমৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাবা শামীম আহমেদ।

“আমার ছেলেটার ঠাণ্ডার সমস্যা ছিল জেনেও তারা ফুলবডি অ্যানেসথেসিয়া কীভাবে দিলো? তাছাড়া খতনা চলাকালে ৩০ থেকে ৪০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীকে তারা দর্শক হিসেবে ওটিতে ঢুকালো। এটা কোন ধরনের ওটি?” ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন মি. আহমদ।

“আসল কথা হচ্ছে আমাদেরকে ওরা মানুষই মনে করে না। মন্ত্রী-মিনিস্টাররা গেলে তাদের কাছে যে ধরনের সেবা পায়, আমরা সাধারণ মানুষরা গেলে সেটা পাই না” বলেন শামীম আহমেদ।

এছাড়া মামলা তুলে নেওয়ার জন্যও বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মি. আহমেদ। এদিকে, শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রোববার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

হাসপাতালটি নিবন্ধন ছাড়াই এতদিন চলছিলো। এমন কী এই নামে কখনও কোন নিবন্ধনের আবেদনও করা হয়নি বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যথাযথ নিয়ম মেনে মূল প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামে নিবন্ধন আবেদন করা হয়েছিলো। সেটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার আরিফুল হক।

অন্যদিকে, এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সেজন্য ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়া হচ্ছে বলে বলেছেন নবনিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

“আমাকে বিভিন্ন মহল থেকে ফোন দেওয়া হচ্ছে, অপরিচিত নাম্বার থেকে। বলা হচ্ছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আপনি বসেন এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে আপনি কী চান বলেন” বলছিলেন মি. আহমেদ।

“তাও আপনি আইন-আদালতের ভেতরে যায়েন না। কারণ এগুলো করে কিছু পাবেন না। এসব বলা হচ্ছে” বলেন তিনি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। “এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই” বলেন ইউনাইটেড হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার আরিফুল হক।

তিনি আরও বলেন, “আমরা শুরু থেকেই বাচ্চার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে আসছি। আর সে কারণেই বিল পরিশোধ না করার সত্ত্বেও বাচ্চার মরদেহ আমরা রিলিজ করে দিয়েছি।” বলেন তিনি।

শিশু মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বলেও জানান মি. হক। “ঘটনাটা আসলে কী ঘটেছে, সেটাই আমরা বের করার চেষ্টা করছি। সেখানে আমরা কেউ সমঝোতার চাপ দিবো”, বলেন তিনি।

নিজেদের কমিটির তদন্তে কারও দোষ প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মি. হক। অন্যদিকে, আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গত ৯ জানুয়ারি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

আয়ানের মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয় সেখানে। পরে আয়ানের বাবা শামীম আহমেদও রিটে আবেদনে পক্ষভুক্ত হন।

একইসাথে, হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল এবং নতুন রোগী ভর্তি না করার নির্দেশনা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করে রিট আবেদনকারীপক্ষ।

সোমবার প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারির পাশাপাশি সারা দেশে অনুমোদনহীন কতগুলো হাসপাতাল রয়েছে, সেই তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।