ইসলাম কারাবন্দীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে। বন্দীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধে এবং কারাগারে তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে ইসলামের নির্দেশনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
বন্দীদের যেসব শাস্তি দেওয়া যাবে না
বন্দীর অঙ্গ বিকৃত করে শাস্তি দেওয়া যাবে না। বন্দীর কোনো অঙ্গ ভেঙে ফেলা, কেটে ফেলা, ছিঁড়ে ফেলা, উপড়ে ফেলা, জখম করা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এমন কোনো শাস্তি দেওয়া যাবে না, যাতে বন্দীর সম্মানহানি হয় বা শারীরিক-মানসিক ক্ষতি হয়। যেমন—বন্দীর মুখে আঘাত করা যাবে না, ঘাড়ে বেড়ি পরানো যাবে না এবং মাটিতে শুইয়ে পেটানো যাবে না।
আগুনজাতীয় কিছু দিয়ে শাস্তি দেওয়া, শ্বাস রোধ করা, পানিতে চোবানো ইত্যাদি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবে এমন কাজের বদলা ও কিসাস হিসেবে হলে বৈধ।
ক্ষুধা ও ঠান্ডায় কষ্ট দেওয়া যাবে না। একইভাবে ক্ষতিকর বা কষ্টকর খাবার খেতে বাধ্য করেও শাস্তি দেওয়া যাবে না। পোশাক পরতে নিষেধ করে শাস্তি দেওয়াও ইসলাম অনুমোদন করে না।
বন্দীকে জামাকাপড় খুলে উলঙ্গ করা যাবে না।
প্রাকৃতিক প্রয়োজন, অজু-গোসল ও নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া যাবে না।
কোনো নারী শিশুসন্তানসহ বন্দী হলে সন্তানকে তার থেকে আলাদা করা যাবে না।
কারাগারের পরিবেশ কেমন হবে
কারাগার মানুষের বসবাসের উপযোগী হতে হবে। তাতে এমন সব উপকরণ থাকতে হবে, যা একজন সুস্থ-সবল মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন। বন্দীকে প্রশস্ত, পরিচ্ছন্ন এবং আলো-বাতাস আসে এমন কক্ষে রাখতে হবে।
বন্দীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাদের চিকিৎসার জন্য একটি চিকিৎসক দল রাখতে হবে।
পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে কয়েদির কক্ষে তালা দেওয়া, তাকে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রাখা বা অন্য কোনোভাবে শারীরিক-মানসিক কষ্ট দেওয়া জায়েজ নেই। একইভাবে আত্মীয়স্বজনকে তার সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়াও অনুচিত।
বন্দীকে স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হবে। উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে তাদের যৌন চাহিদা পূর্ণ করার সুযোগ দিতেও উৎসাহ দেয় ইসলাম।
কারাগারে অবশ্যই অজু-গোসলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটি সুস্থতার অপরিহার্য উপাদান।
কারাগারের পরিবেশ সার্বক্ষণিক তদারক করতে হবে। বন্দীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করতেও উৎসাহিত করে ইসলাম।
অসুস্থ বন্দীর চিকিৎসার বিধান
অসুস্থ মানুষকে বন্দী করা যাবে কি না—এ বিষয়ে ফকিহগণ বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে বিচারককেই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। কতটুকু অসুস্থ হলে বন্দীর কারাগারে থাকতে সমস্যা হবে এবং কতটুকু হলে সমস্যা হবে না, তা বিচারক বন্দীর অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বন্দী যদি কারাগারে অসুস্থ হয় এবং সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে, তবে সেখান থেকে বের করা যাবে না।
কারাগারে চিকিৎসা করা সম্ভব না হলে কারাগার কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এবং প্রহরায় বাইরে চিকিৎসা করানো যাবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে শারীরিক অসুস্থতা যেমন ধর্তব্য হবে, তেমনি মানসিক অসুস্থতাও ধর্তব্য হবে। তবে অসুস্থতার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে বাইরে কোনো হাসপাতালে অবস্থান করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তথ্যসূত্র: আহকামুস সিজ্নি ওয়া মুআমালাতুস সুজানা ফিল ইসলাম, পৃ. ৩৬৭-৩৭৯; ২. আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ১৬ / ৩২০-৩২৭; ৩. ইসলামকিউএ ডট ইনফো, ফতোয়া: ৫১৫৭।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |