প্রচ্ছদ অপরাধ ও বিচার একবছরে জেলে খরচ পাঁচ লাখ, কথা হতো এমপির সঙ্গেও

একবছরে জেলে খরচ পাঁচ লাখ, কথা হতো এমপির সঙ্গেও

অপরাধ: জামিনে কারামুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু এক সভায় বলেছেন, ‘এক বছরের উপরে জেলে ছিলাম। জেলখানায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছে সাধুরপাড়ার গরীব মানুষ।’

তিনি দাবি করেন, ‘জেলে থাকা অবস্থায় জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। এমপি বলেছেন, ‘বের হয়ে আস, এ মামলা মীমাংসা করে দেব।’

বাবু চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কারাগার থেকে বেরিয়ে গত বুধবার (১০ জুলাই) রাতে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কেবি মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক সভায় এক বক্তব্য এসব কথা বলেন তিনি।

হাইকোর্ট জামিন আদেবন মঞ্জুর করায় মাহমুদুল আলম বাবু ওই দিন বিকাল ৫টার দিকে এক বছর ২৩ দিন কারাভোগের পর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। কারাগার থেকে বের হয়েই কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করে নিজ গ্রামে ফিরে জনসভায় যোগ দেন তিনি।

মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত এবং আওয়ামী লীগের পদ তেকে বহিষ্কার করা হয়।

ভিডিওতে বাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘১৭ জুন আমি অ্যারেস্ট হয়েছিলাম পঞ্চগড় আমার নানার বাড়ি থেকে। আপনারা জানেন, এই মামলা নিয়ে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে…। জেলখানা ভালো জায়গা না। আমি দীর্ঘ এক বছরের উপরে ছিলাম। আমি আসলে অনেক কষ্ট করেছি। অনেক গরীব মানুষ ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে আমাকে দেখে আসছে। আপনাদের এ কথা আমি সারাজীবন মনে রাখবো। জেলাখায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকলে, তার সাড়ে চার লাখ টাকা সাধুরপাড়ার গরীব মানুষ দিয়েছে।’

বিয়ে করেছেন রিশাদ, দেনমোহর ছিল ১০১ টাকাবিয়ে করেছেন রিশাদ, দেনমোহর ছিল ১০১ টাকা
এ বিষয়ে কথা বলতে সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তার বক্তব্যের বিষয়ে নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বীলা-তুল-জান্নাত বলেন, ‘তিনি তো জেলখানায় রাজকীয় জীবনযাপন করেছেন। যে ব্যক্তির জেলখানায় একবছরে পাঁচ লাখ টাকা লাগে, তার জেলখানা আর বাইরে একই কথা। তাকে বেআইনিভাবে জেলাখানায় সহযোগীতা করা হয়েছে। বাবা হত্যার এক বছর পার হয়েছে। প্রধান আসামি জামিনে জেল থেকে মুক্ত হয়েই উত্তেজনাকর বক্তব্য দিচ্ছেন। মামলায় নাকি তার (মাহমুদুল) আর কোনো সমস্যা হবে না। বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ হয়। প্রধান আসামি জেল থেকে বের হওয়ায় আমরা আতঙ্কগ্রস্ত। তার প্রভাবে মামলার অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এতে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছি।’

জামালপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘জেলাখানায় বেআইনি সহযোগীতায় তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করেছে। বক্তব্যে তাই প্রমাণ করে। অপরাধী যদি জেলখানায় বেআইনি সহযোগীতা পায় তাহলে তো অপরাধ দিন দিন বেড়েই যাবে। তিনি জেল থেকে মুক্তি পাওয়ায় মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ইউসূফ আলী বলেন, ‘বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝা যায় তিনি জেলখাখায় রাজকীয় জীবনযাপন করছেন। অনৈতিক, বেআইনিভাবে তাকে সহযোগীতা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই মামলা তিনি প্রভাবিত করতে পারেন। জেল থেকে বের হয়েই এলাকায় গিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে মামলার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’

মাহমুদুল আলম বাবুর বক্তব্যের ব্যাপারে জামালপুর কারাগারের জেলার আবু ফাতাহ্ বলেন, ‘এখানে এতো টাকা খরচ করার কোন সুযোগ নেই। আর বাবু চেয়ারম্যান সাধারণ বন্দীদের মতোই ছিলেন। সাধারণ ওয়ার্ডে ফ্লোরে ঘুমিয়েছেন। জেলখানার খাবার খেয়েছেন। তিনি যা বলেছেন সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেছেন।’

নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টেলিভিশনের বকশীগঞ্জ উপজেলার প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ওই উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের গোমের চর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।