কারাগার থেকে বেরিয়ে একের পর এক বাজিমাত করছেন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল। দীর্ঘ কারাবরণের পর গত ১৮ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে নতুন করে ব্যবসার হাল ধরেছেন তিনি। ২৯ ডিসেম্বর শুরু করেন ইভ্যালির প্রথম ক্যাম্পেইন ‘বিগব্যাং’। মাত্র ২০ ঘণ্টায় ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেয়ে শুরুতেই বাজিমাত করেন তিনি।
গ্রাহক-মার্চেন্টের এমন অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে নতুন উদ্যমে ব্যবসায়িক আয়োজন চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রাত ১০টা থেকে শুরু হচ্ছে ‘বিগব্যাং-টু’। এবারের ক্যাম্পেইনে বেশকিছু পণ্যে ব্যাপক মূল্যছাড় দিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে ইভ্যালি নিজ থেকে কোনো পণ্যে ছাড় কিংবা লোকসান দিচ্ছে না।
বিগব্যাং-টুতে যেসব পণ্যে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম মোটরসাইকেল। ১৫০ সিসির নাইট রাইডার ভিটু বাইকের বর্তমান বাজার মূল্য ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এই বাইকটিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। বিগব্যাং-টুতে এটি কেনা যাবে ১ লাখ ২২ হাজার টাকায়।
ইভ্যালি সূত্রে জানা যায়, বিগব্যাং-টুতে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো ইভ্যালির প্ল্যাটফর্মে বিক্রির জন্য প্রায় ১১ হাজার ৫০০ পণ্য নির্বাচন করেছেন।
আবারও মেগা ক্যাম্পেইন নিয়ে আসছে ইভ্যালি এ বিষয়ে ইভ্যালির মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘ইভ্যালি নতুনভাবে শুরু করার পর আমরা যেমনটি আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছি। তবে ইভ্যালি নিজে থেকে কোনো পণ্যে লোকসান বা ভর্তুকি দিচ্ছে না। যে ছাড় দেওয়া হচ্ছে তা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানই দিচ্ছে।’
ইভ্যালির আগের ক্যাম্পেইনের তুলনায় এবারের ক্যাম্পেইনে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। আগে ব্যাপক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলেও, এবার এক টাকাও বিজ্ঞাপনে ব্যয় করা হয়নি। আগে বেশিরভাগ পণ্যই লোকসানে বিক্রি করা হতো। তবে এবার প্রায় সব পণ্যে খুব সামান্য পরিমাণ লাভ রাখা হয়েছে। এই লাভের অর্থ দিয়ে কোম্পানির মাসিক ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। এ জন্য ইভ্যালিকে নতুন করে কোনো দেনায় পড়তে হবে না। বরং লাভের পরিমাণ একটু বাড়লেই আগের ঋণ শোধ শুরু করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল।
অন্যদিকে আগে গ্রাহকরা পণ্য পাওয়ার আগেই সরাসরি ইভ্যালিকে টাকা পরিশোধ করত। কিন্তু এবার ক্যাশ অন ডেলিভারি হওয়ায় গ্রাহকের কোনো ঝুঁকি নেই। এ ছাড়া গ্রাহকের পরিশোধ করা পণ্যের মূল্যও এখন থেকে সরাসরি বিক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে বিক্রেতার কোনো বাকি পড়ার ঝুঁকি নেই বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে রাসেল কালবেলাকে বলেন, ‘গ্রাহককে এখন আর বিশ্বাসের ওপর টাকা দিতে হচ্ছে না। পণ্য হাতে পেয়ে টাকা দেবেন। এজন্য ইভ্যালিতে গ্রাহকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আমরা খুব সামান্য লাভ করছি যেন কোম্পানির খরচ চালিয়ে নেওয়া যায়। আর যেসব পণ্যে ছাড় দেওয়া হচ্ছে এটা বিক্রেতা নিজের পক্ষ থেকে দিচ্ছেন। এ জন্য ইভ্যালির আর লোকসানের সুযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ২০১৮ সালে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠা করে হইচই ফেলে দেন মোহাম্মদ রাসেল। মাত্র দুই বছরের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে ইভ্যালি। কিন্তু ওই সময় ঋণের বোঝাও বেড়ে যায় তাদের। তবে অভিযোগ আছে, ইভ্যালিকে থামানোর জন্য তখন দেশি-বিদেশি কয়েকটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান উঠেপড়ে লাগে। তার জন্য মোটা অঙ্কের বরাদ্দও করেন তারা। একপর্যায়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেপ্তার হন রাসেল। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তারে হতাশ হন প্রতিষ্ঠানটির লাখ লাখ গ্রাহক। তারা ইভ্যালির ব্যবসা চালুর জন্য আন্দোলন শুরু করেন। তাকে মুক্তি দিতে ২০ হাজারের বেশি ক্রেতা-বিক্রেতা আদালতের কাছে লিখিত আবেদন করেন।
এর মধ্যে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন রাসেল ও তার প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তবে তার স্ত্রী ও ইভ্যালির চেয়ারম্যান অনেক আগেই মুক্তি পেয়েছেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |