সারাদেশ: জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৃতীয় তলার বারান্দায় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাতে ৪৫ মিনিটের ব্যবধানে সদর থানায় মামলা দুটি নথিভুক্ত করা হয়। তবে পৃথক দুটি মামলার কোনো আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। একটি মামলার বাদী জয়পুরহাট সদর উপজেলার গঙ্গাদাশপুর গ্রামের আজিজুল ইসলাম। তার মামলায় আইনজীবী মাসুম রব্বানীকে আসামি করা হয়েছে। তিনি ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের পেটে লাথি মারা ও স্বজনদের মারধরের অভিযোগ এনেছেন। আর অন্য মামলার বাদী জয়পুরহাট জজ আদালতের আইনজীবী মাসুম রব্বানী মন্ডল নিজেই। তার মামলায় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী, তার স্বামী, বাবা, শ্বশুরসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। সেখানে তিনি তার মক্কেলের শিশু কন্যা অপহরণের চেষ্টা এবং তাকে মারপিট করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
এদিকে ন্যায়বিচার ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নির্যাতনের শিকার নারীর বাবা আজিজুল ইসলাম। এ সময় আজিজুলের ১০ থেকে ১২ জন স্বজন উপস্থিত ছিল। আজিজুল ইসলামের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান তার ভাই ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর আগে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল গ্রামের নুর আলমের সঙ্গে মোছা. রিনা খাতুনের বিয়ে হয়। এর আগে জামাই নুর আলম দাম্পত্য কলহের জেরে প্রথম স্ত্রী মনিরা খাতুনকে তালাক দিয়েছিলেন। জামাইয়ের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আট বছরের একটি শিশু কন্যা রয়েছে। জামাই তার কন্যা সন্তানকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার জন্য জয়পুরহাট পারিবারিক সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে মামলার শুনানি শেষে আদালতের তৃতীয় তলার বারান্দায় জামাই নুর আলম তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর কাছে থাকা শিশু কন্যাকে দেখার চেষ্টা করেন। এ সময় জামাইয়ের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর পক্ষের আইনজীবী মাসুম রব্বানী তাকে বাধা দেন। তখন আমার জামাই নুর আলম তার সন্তানকে দেখতে বাধা দেওয়ার কারণ আইনজীবীর কাছে জানতে চান। তখন ওই আইনজীবী ক্ষিপ্ত হয়ে জামাই নুর আলমকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। স্বামীকে মারধর করা দেখে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা রিনা খাতুন এগিয়ে স্বামীকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তখন আইনজীবী মাসুম রব্বানী তার পেটে লাথি মারেন। তখন রিনা আদালতের বারান্দায় পড়ে যান। তারা রিনা ও নুর আলমকে মারধর করেন। তাদের আদালতের বারান্দা থেকে উকিল বারের চতুর্থ তলায় নিয়ে আটকে রাখা হয়।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর বাবা আজিজুল ইসলাম বলেন, উকিল বারে নিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করার কথা বলে আমার অসুস্থ মেয়েকে দিয়ে আইনজীবী মাসুমের পা ধরানো হয়। এরপর উকিল বার থেকে আমার মেয়ে, জামাই ও বিয়াইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনাটি বাহিরে জানাজানি ও মামলা মোকদ্দমা না করতে ভয়ভীতি দেখানো হয়। আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে রিনা খাতুন ২৫০ শয্যার জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসাধীন ছিল। আমরা থানায় এজাহার দেওয়ার পর মামলা নিতে চাইছিল না। কয়েকদিন পরে মামলাটি নেওয়া হয়। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করছি।
এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আদালতের তৃতীয় তলার সিঁড়ির দিকে ধস্তাধস্তি করতে দেখা যায় দুই পক্ষকে। প্রথমে তারা ধস্তাধস্তি করতে করতে সিঁড়ির দিক থেকে বারান্দায় আসেন। কয়েকজন তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। মারধর করা দেখে এগিয়ে আসেন এক নারী। ওই নারী বোরকা পরিহিত ছিলেন। সেখানে এক আইনজীবী ওই নারীর পেটে একটি লাথি মারেন। তখন ওই নারী বারান্দায় পড়ে যান। এরপর আবারো লাথি মারার চেষ্টা করলে এক যুবক দৌড়ে এসে ওই আইনজীবীকে একটি লাথি মারেন। ওই নারী বারান্দায় পড়ে থাকলে সেখানে ভিড় জমে যায়। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আইনজীবী মো. মাসুম রব্বানী বলেন, নারীকে লাথি মারার এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর আমিও একটি মামলা থানায় করেছি। সেখানে বিস্তারিত লেখা আছে। জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির বলেন, আদালতে মারধরের ঘটনায় দুই পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |