প্রচ্ছদ রাজনীতি তিন আসনে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে বিএনপিতে গৃহদাহ

তিন আসনে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে বিএনপিতে গৃহদাহ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জামালপুরের তিনটি আসনে বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন নেতারা। সামাজিক মাধ্যমেও চলছে একে-অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার।

মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নিয়মিত মানববন্ধন, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বঞ্চিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। উভয়পক্ষই সামাজিক মাধ্যমে দিচ্ছেন নানা রকম পোস্ট। এসব কারণে দ্বিধাগ্রস্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, নির্বাচনের আগেই দলের স্বার্থে বিভেদ দূর হওয়া দরকার। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন বলেছেন, দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা চলছে। দলীয় নেতাদের মতবিরোধ নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

জামালপুর-১: দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জামালপুর-১ আসন। এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। তিনি দেওয়ানগঞ্জের বাসিন্দা। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার। ব্যক্তিগত ইমেজ ও আঞ্চলিকতার টানে বিপুল সংখ্যক ভোটে ভাগ বসাবেন তিনি। অনেকে বলছেন, দুই প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতা না হলে এই আসনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বিএনপি।

জামালপুর-২: ইসলামপুর আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই আসন থেকে হয়েছেন একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। এবার এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবুকে। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। মনোনয়ন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আব্দুল হালিমের কর্মী-সমর্থকরা সুলতান মাহমুদ বাবুকে অসুস্থ ও সংস্কারপন্থি আখ্যা দিয়ে তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। অপরদিকে, দলীয় প্রার্থী বাবুর মনোনয়ন বহাল রাখার দাবিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলামের নেতৃত্বে নানমুখী আন্দোলন কর্মসূচি চলছে। এই আসনে দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদও।
স্থানীয়দের অভিমত, দলীয় ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে এই আসনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বিএনপি। কারণ এখান থেকে নির্বাচন করবেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংঠনিক সম্পাদক ড. সামিউল হক ফারুকী।

বিএনপির প্রার্থী সুলতান মাহমুদ বাবু বলেছেন, ২০০১ সালে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ মোশারফকে হারিয়ে নির্বাচিত হন তিনি। ক্ষমতায় থাকাকালে অবহেলিত ইসলামপুরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। দীর্ঘদিনেও ইসলামপুরবাসী তাঁর অবদানের কথা ভুলে যাননি। তাঁর ভাষ্য, এখন যারা তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন, তাদের গত ১৭ বছর কোনো আন্দোলন সংগ্রামে পাওয়া যায়নি; বরং আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে আঁতাত করে সুবিধা নিয়েছেন।

অপরদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছেন তিনি। দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েই গণসংযোগ করে চলেছেন। তাঁর আশা, দল তাঁকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে।
জামালপুর-৩: মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ আসনে এবার ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক ও মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। এর আগেও তিনি তিনবার দলীয় মনোনয়ন পান। এবার মনোনয়ন পেলেও প্রতিবন্ধকতা তাঁর পিছু ছাড়ছে না। এই আসনে দলীয় মনোনয়নের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফাইজুল ইসলাম লাঞ্জু, মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান সিদ্দিকী শুভ ও সাবেক সচিব এ কে এম ইহসানুল হক মঞ্জু।
মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেছেন, ইতোপূর্বে দল তাঁকে তিনবার মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও মির্জা আজমের ‘নীল নকশার’ নির্বাচনে জনগণ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারায় তাঁকে পরাজয়ের গ্লানি মেনে নিতে হয়েছে। এবারও দলের হাইকমান্ড তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তাঁর ভাষ্য, দলের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। সময়মতো সব ঠিক হয়ে যাবে। ভোট সুষ্ঠু হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এবার নির্বাচিত হওয়ার আশা করছেন তিনি।

এদিকে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসন ও জামালপুর-৫ (সদর) আসনে বিএনপির দলীয় ঐক্য থাকায় মনোনয়ন যুদ্ধের কোনো আশঙ্কা নেই। জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেছ আলী মামুন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিরামহীন গণসংযোগ, কর্মিসভা ও সমাবেশ করছেন।

জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ‘দলের মধ্যে কোন্দল নেই। মনোনয়ন নিয়ে দলের নেতাদের যে মতবিরোধ তা নিরসনের জন্য জেলা বিএনপি থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দলীয় হাইকমান্ডকেও জানানো হয়েছে। চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণার পর এসব সমস্যা থাকবে না।’

সূত্র : সমকাল