৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকায় ‘এমপি মনোনয়ন বিক্রি’র প্রতারণা

জাতীয়: নিজেকে পরিচয় দেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নিকটাত্মীয়। এই পরিচয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলেন বিভিন্ন আসনে সংসদ সদস্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে। তাঁদের মনোনয়নপত্র পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে করতেন দর-কষাকষি। কারো কাছে ৫০ কোটি, কারো কাছে ১০০ কোটি, আবার কারো কাছে ৩০০ কোটি টাকা দাবি করতেন তিনি।

আর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে দামি গাড়িতে করে বড় বড় হোটেলে সাক্ষাৎ করতেন। ইতিমধ্যে মনোনয়ন পেতে ১০ থেকে ১১ জন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন।
শুধু তা-ই নয়, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বা পদোন্নতির আশ্বাস দিয়ে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে বিপুল অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবসাও করতে চেয়েছিলেন তিনি।

গ্রেপ্তার প্রতারক আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অভিযানে তাঁর কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, অ্যামুনেশন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ও বিভিন্ন ভিডিও এবং এডিট করা ছবি জব্দ করা হয়। হানিফের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়।

র‍্যাব জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি-রাজনৈতিক দলের পদ পাইয়ে দেওয়াসহ নানা প্রতারণা করে ৩০ জনের বেশি মানুষের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি লুটে নিয়েছেন হানিফ। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতারণার জন্য হানিফ বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতেন। দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন বেনামি মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে নিজে বা চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করতেন। বার্তা মাধ্যমেই তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার মতো অপকাণ্ড করতে চেয়েছিলেন।

খন্দকার আল মঈন জানান, হানিফ নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও মিথ্যাচার করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি মোটর পার্টস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরিবহন সেক্টরে দেশের বিভিন্ন রুটে ‘তুষার এন্টারপ্রাইজ’ পরিবহন নামে তাঁর বেশ কয়েকটি বাস ও নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাইভেট কার রয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করেন হানিফ। ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্পন্সর করে রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসেন তিনি। প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জমি ও সম্পত্তির মালিক হওয়া, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় একাধিকবার কারাভোগ করেছিলেন হানিফ।