২৫ দিনেও নিখোঁজ শামীম, মেয়ে বলছে ‘বাবাকে পচা মানুষ ধরে নিয়ে গেছে’

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

রাজধানীর উত্তরার লুবনা হাসপাতাল থেকে মধ্যরাতে অসুস্থ মাকে দেখে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও দুই সন্তানের জনক মো. আবু শামীম (৩১)। নিখোঁজের ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তার সন্ধান দিতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এতে উৎকণ্ঠায় আছে শামীমের পরিবার।

শামীমের পরিবার বলছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে। গত ৩১ মে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি সড়ক থেকে রাত দেড়টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাকে নিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন শামীমের বড় ভাই আবু সেলিম মো. আল মামুন অর রশিদ বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেন।

জানা যায়, শামীম ২০১৮ সালের ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের মিজান-মহিউদ্দিন কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন। শামীমের তিন বছর বয়সী সিয়না বিনতে শামীম (৩) ও ১০ মাস বয়সী সিয়ারা বিনতে শামীম নামের দুই মেয়ে রয়েছে।

বড় মেয়ে জন্মের পর এই প্রথমবার দীর্ঘদিন বাবাকে দেখতে না পাওয়ায় বিষণ্ণতায় ভুগছে বলে জানিয়েছে পরিবার। কেউ তার কাছে বাবা কোথায় জানতে চাইলে উত্তর দেয়, ‘বাবাকে পচা মানুষ ধরে নিয়ে গেছে!’ শামীমের মা সাজেদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য আমাদের জানা নেই।

যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হোক।’ শামীমের স্বজনরা লুবনা হাসপাতাল থেকে ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেন। তাতে দেখা যায়, গত ৩১ মে মধ্যরাতে হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি মাকে দেখে রাত ১টা ২৪ মিনিটে বের হন শামীম। সঙ্গে নেন ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেল। তখন এক ব্যক্তি শামীমকে অনুসরণ করছে।

এ সময় সেই ব্যক্তি ইশারা করেন একটি মাইক্রোবাসকে। শামীমের বাইককে তখন ফলো করছে মাইক্রোবাসটি। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের লুবনা হাসপাতালের সামনে থেকে উত্তরা পশ্চিম থানার মূল সড়ক পর্যন্ত এসে ইউটার্ন নিয়ে ১৮ নম্বর সেক্টরের বাসায় যাওয়ার কথা শামীমের। কিন্তু রাত দেড়টার পর থেকে বন্ধ পাওয়া যায় তার ফোন।

পরিবার ধারণা করছে, পশ্চিম থানার মূল সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে কী হয়েছিল সে সময়। যদিও ঘটনার ২৫ দিন পরও ওই সড়কের কোনো সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নিজেরাই দেখতে পায়নি বা দেখেনি উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ। এ ব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মাসুদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি জিডি হয়েছে। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। ফোনটি উত্তরা এলাকায় বন্ধ হওয়ার পর আর চালু হয়নি। তার নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেগুলো অস্পষ্ট।’

মূল সড়কের সবগুলো ফুটেজ এবং মোটরসাইকেল পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবগুলো ফুটেজ এখনো পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ১৬০ সিসির মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি নিখোঁজকে উদ্ধারসহ সব কিছুই উদ্ধার করতে।’ থানায় জিডি দায়েরকারী ও শামীমের বড় ভাই আল মামুন অর রশিদ বলেন,

‘আমরা হাসপাতালের সামনের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, শামীম হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সামনে রাখা মোটরসাইকেলের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় দুজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি শামীমকে অনুসরণ করছিল। মোটরসাইকেলে ওঠার সময় এক ব্যক্তি একটি মাইক্রোবাস ডেকে আনে। মাইক্রোবাসটি শামীমের মোটরসাইকেলটি অনুসরণ করতে থাকে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, শামীমের নিখোঁজের জিডি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজসহ সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

দেশজুড়ে

২৫ দিনেও নিখোঁজ শামীম, মেয়ে বলছে ‘বাবাকে পচা মানুষ ধরে নিয়ে গেছে’

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

রাজধানীর উত্তরার লুবনা হাসপাতাল থেকে মধ্যরাতে অসুস্থ মাকে দেখে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও দুই সন্তানের জনক মো. আবু শামীম (৩১)। নিখোঁজের ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তার সন্ধান দিতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এতে উৎকণ্ঠায় আছে শামীমের পরিবার।

শামীমের পরিবার বলছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে। গত ৩১ মে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি সড়ক থেকে রাত দেড়টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাকে নিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন শামীমের বড় ভাই আবু সেলিম মো. আল মামুন অর রশিদ বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেন।

জানা যায়, শামীম ২০১৮ সালের ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের মিজান-মহিউদ্দিন কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন। শামীমের তিন বছর বয়সী সিয়না বিনতে শামীম (৩) ও ১০ মাস বয়সী সিয়ারা বিনতে শামীম নামের দুই মেয়ে রয়েছে।

বড় মেয়ে জন্মের পর এই প্রথমবার দীর্ঘদিন বাবাকে দেখতে না পাওয়ায় বিষণ্ণতায় ভুগছে বলে জানিয়েছে পরিবার। কেউ তার কাছে বাবা কোথায় জানতে চাইলে উত্তর দেয়, ‘বাবাকে পচা মানুষ ধরে নিয়ে গেছে!’ শামীমের মা সাজেদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য আমাদের জানা নেই।

যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হোক।’ শামীমের স্বজনরা লুবনা হাসপাতাল থেকে ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেন। তাতে দেখা যায়, গত ৩১ মে মধ্যরাতে হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি মাকে দেখে রাত ১টা ২৪ মিনিটে বের হন শামীম। সঙ্গে নেন ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেল। তখন এক ব্যক্তি শামীমকে অনুসরণ করছে।

এ সময় সেই ব্যক্তি ইশারা করেন একটি মাইক্রোবাসকে। শামীমের বাইককে তখন ফলো করছে মাইক্রোবাসটি। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের লুবনা হাসপাতালের সামনে থেকে উত্তরা পশ্চিম থানার মূল সড়ক পর্যন্ত এসে ইউটার্ন নিয়ে ১৮ নম্বর সেক্টরের বাসায় যাওয়ার কথা শামীমের। কিন্তু রাত দেড়টার পর থেকে বন্ধ পাওয়া যায় তার ফোন।

পরিবার ধারণা করছে, পশ্চিম থানার মূল সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে কী হয়েছিল সে সময়। যদিও ঘটনার ২৫ দিন পরও ওই সড়কের কোনো সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নিজেরাই দেখতে পায়নি বা দেখেনি উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ। এ ব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মাসুদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি জিডি হয়েছে। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। ফোনটি উত্তরা এলাকায় বন্ধ হওয়ার পর আর চালু হয়নি। তার নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেগুলো অস্পষ্ট।’

মূল সড়কের সবগুলো ফুটেজ এবং মোটরসাইকেল পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবগুলো ফুটেজ এখনো পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ১৬০ সিসির মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি নিখোঁজকে উদ্ধারসহ সব কিছুই উদ্ধার করতে।’ থানায় জিডি দায়েরকারী ও শামীমের বড় ভাই আল মামুন অর রশিদ বলেন,

‘আমরা হাসপাতালের সামনের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, শামীম হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সামনে রাখা মোটরসাইকেলের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় দুজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি শামীমকে অনুসরণ করছিল। মোটরসাইকেলে ওঠার সময় এক ব্যক্তি একটি মাইক্রোবাস ডেকে আনে। মাইক্রোবাসটি শামীমের মোটরসাইকেলটি অনুসরণ করতে থাকে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, শামীমের নিখোঁজের জিডি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজসহ সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker