দেশজুড়ে

১৭ বছর ধরে জঙ্গলে করুণ জীবন

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

জঙ্গলের মাঝে ঝোপ ও বাঁশঝাড় পেরিয়ে দেখা মিললো পলিথিনে মোড়ানো ছাউনি। সেখানে ছোট খুপরিতে বসে আছেন ৬০ বছর বয়সী চিরকুমার মুজিবুর রহমান। প্রশাসনের লোকজন আসার সংবাদে বেরিয়ে আসেন। প্রশ্ন করতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে শোনালেন জীবনের গল্প।

খুপরি ঘরে মুজিবুর রহমান

তার গল্প শুনে অশ্রুসিক্ত উপস্থিত সবার চোখ। সচ্ছল পরিবারেই জন্ম তার। তবে সৎ ভাইদের রোষানলে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে জঙ্গলেই ঠাঁই নিয়েছেন। করা হয়নি বিয়েও। একদিন দুদিন নয়, ১৭ বছর ধরে জঙ্গলে তিনি। শিয়াল, সাপ, ইঁদুর ও বিচ্ছুর সঙ্গে অর্ধাহার-অনাহারে কেটেছে সময়।

রবিবার (২৮ মে) দেবিদ্বার উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া মৌলভী বাড়ির পাশে একটি জঙ্গলে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।

বেশ কিছু দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এভাবে জীবনযাপনের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এরপর ঘটনাস্থলে যান কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার মানুষ। তারা শোনেন চিরকুমার মুজিবুর রহমানের মানবেতর জীবনের গল্প। তার করুণ জীবনের গল্প শুনে পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

মুজিবুর রহমান জানান, তার বাবা মৃত লাল মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে। এ সংসারে একমাত্র সন্তান তিনি। প্রথম সংসারের দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। তার বাবা লাল মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎ ভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। তিনিও কাঁচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে সৎ ভাই জহিরুল ইসলামকে বিএ পাস করান। সেই ভাই পৈতৃক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

তিনি আরও জানান, স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২০০৭ সাল থেকে জঙ্গলে খুপরি বানিয়ে ঠাঁই নেন। মিলের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে ইলেকট্রিকের কাজ শুরু করেন। অভাব জেঁকে ধরতে ধরতে বাঁ চোখটিও নষ্ট হয়ে যায়। অর্ধাহার-অনাহারে, রোদ, ঝড়-বাদলে, শেয়ালের হাঁক-ডাকের মাঝেই খুপড়ির মধ্যেই থাকেন। কখনও লাকড়ির চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ করে লবণ মরিচ দিয়ে খেতেন। কখনও শুকনো খাবার খেয়ে থাকেন। দুঃখ করে বলেন, শিয়াল-সাপ-বিচ্ছু-মশা আমার ক্ষতি করেনি- মানুষ যা করেছে।

এ বিষয়ে জানতে তার ভাই জহিরুলকে পাওয়া যায়নি। তবে বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন বলেন, কাকা অভিমানী। দাদার জায়গা-জমি ভাগ হয়নি এখনও। তবে চাচা (জহিরুল ইসলাম) কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছে। চাচার পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা জানান, তার বাবার জমির কাগজপত্র নিয়ে নির্বাহী (ভূমি) সঙ্গে দেখা করার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে জমি উদ্ধার করে দেওয়া হবে। না হয় আবাসনের ব্যবস্থা করে দেবো।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষণিক চোখের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দেন। সচ্ছলতা আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker