
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পতিসরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসবের নামে যাত্রাপালায় ব্যাপক অশ্লীলতাসহ নগ্ন নৃত্যের অভিযোগ উঠেছে। গত পহেলা জুন থেকে ‘আনন্দ অপেরা’ যাত্রার নামে এই নগ্ন নৃত্য চলছে বলে জানা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, এমন নৃত্য বন্ধ না হলে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়বে।
স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিনে জানা যায়, গত ৮ মে জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় আয়োজন হিসেবে পতিসরে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র জন্মোৎসব শেষ হয়।
এরপর স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের রবীন্দ্র ভক্ত দাবি করে রবীন্দ্র জন্মোজয়ন্তীর নামে জেলা প্রশাসক বরাবর মাসব্যাপী পতিসর এলাকায় যাত্রাপালার আবেদন করে অনুমতি নেয়।
যেখানে গ্রামীণ যাত্রাপালা পরিবেশনের জন্য ‘আনন্দ অপেরা’ যাত্রা পালার নামে গত পহেলা জুন থেকে নগ্ন নৃত্য পরিবেশন করা হচ্ছে। রাত ১১টার পর থেকে চলে এই নগ্নতা। সেখানে ২০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাত যত গভীর হয় যাত্রাপালার নামে নগ্নতা ততই বাড়ে। টিকেট কেটে যাত্রা পান্ডেলে প্রবেশের পর মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে নারী নৃত্য শিল্পীদের বিশেষ স্থানে হাত দেবার দৃশ্যও চোখে পড়ার মতো।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসবের নামে এমন অশ্লীলতায় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে এই যাত্রাপালা বন্ধসহ কবিগুরুর নামকে কুলষিত করায় এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
স্থানীয় পতিসর এলাকার আবাদুস সামাদ বলেন, জীবনে যাত্রা দেখেছি অনেকবার। কিন্তু এমন নগ্ন নৃত্য দেখিনি কখনও। এ নৃত্য বন্ধ না হলে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়বে। প্রশাসন কীভাবে এমন অনুমতি দিলো বুঝলাম না।
আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বাদলের ছত্র-ছায়ায় এমন আয়োজন চলছে এবং তিনি বাটোয়ারা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলায় নিয়ম মেনে যাত্রাপালা চলছে, কোনো অশ্লীলতা হচ্ছে না। তাকে মেলায় ধারণকৃত অশ্লীল নৃত্যের ভিডিও ও ছবি দেখানো হলে চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বলেন জেলা প্রশাসন জেনে-বুঝে মেলার অনুমতি দিয়েছে।
যাত্রার সমন্বয়কারী মতিউর রহমান মামুন বলেন, আমরা রবীন্দ্র ভক্ত। আমি একজন রবীন্দ্র গবেষক। রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে দেশের সুস্থ্য সাংস্কৃতি র্চচা বিকশিত করতে মাসব্যাপী যাত্রাপালার আয়োজন করেছি। যেখানে রবীন্দ্র ভক্তরাসহ সকলেই এসে বিনোদন উপভোগ করতে পারবে। এখানে এসে কিশোর-যুবকরা আনন্দ করছে। আমাদের এই যাত্রাপালার মাধ্যমে সারাদেশে সুস্থ্য সাংস্কৃতির উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। কোনো ধরনের নগ্নতা হচ্ছে না বলে দাবি তার।
আত্রাই থানার ওসি তারেকুর রহমান সরকার বলেন, যাত্রায় অশ্লীলতার বিষয়ে জানতে পেরে বৃহস্পতিবার ভোরে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। পরবর্তিতে তারাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।