যে চার প্রশ্নের জবাব খুঁজছে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল

কমিশনসহ সংবিধান প্রতিষ্ঠানসমূহের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা মার্কিন মিশনকে বলা হয়েছে।

ভোটের সময় পর্যবেক্ষক দল পাঠানো নিয়ে কথা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, তারা বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে, জানতে এসেছে। সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে।

গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান, বৈঠকে প্রতিনিধিদলটি আগামী নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, আলোচনায় সে বিষয়ের জোর দিয়েছে। এ ছাড়া এর আগে এখানে নির্বাচনে কী ধরনের অসুবিধা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা নানা প্রশ্ন করেছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে ভাল হয়। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে, তা সুষ্ঠু হলো কি হলো না, তা বোঝা যায় না। তারা শেষ পর্যন্ত সবার অংশগ্রহণে কীভাবে নির্বাচন সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে।

বৈঠকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনপদ্ধতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে দলটি।

আগামী নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে দেশে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে।

জাতীয় পার্টি এখনো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, তাঁর দল নির্বাচনে যাবে না, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। অবস্থা দেখে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিতে ‘গ্রহণযোগ্য’ প্রস্তাব এলে জাতীয় পার্টি বিবেচনা করবে বলে জি এম কাদের উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ ঢাকার একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের সাথে আমার বাংলাদেশ পার্টি এবি পার্টিসহ আরও ৪ টি দলের সঙ্গে বৈঠক করে।

এবি পার্টির পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে মতামত ও মূল্যায়ন তুলে ধরেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব ও কূটনৈতিক টিমের প্রধান ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

যে চার প্রশ্নের জবাব খুঁজছে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল
এবি পার্টি নেতা প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনকে বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১১ টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের অধীনে অনুষ্ঠিত ৭টি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য। বাকী ৪টি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল তুলনামূলকভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য। আজ এটা সর্বসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।

ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ পর্যবেক্ষক টিমকে আরও বলেন, ১২ কোটিরও বেশী ভোটারদের জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা একটি বিশাল কাজ যা পুরো নির্বাহী এবং জনপ্রশাসনের সম্পূর্ণ নিযুক্তি ছাড়া পরিচালনা করা সম্ভব না। জনপ্রশাসনের এই পুরো টিম থাকে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। ভোট গ্রহণ, গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করে মাঠে নিয়োজিত প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারা ইচ্ছেমতো নির্বাচন অনিয়ম ও কারচুপি করে থাকে। দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন একা কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারে না।

তিনি আরও বলেন “গণতন্ত্র চর্চায় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন, এর মাধ্যমেই জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে, গণপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। একই প্রক্রিয়ায় এর বিপরীত পরিণতিও যে ঘটে তা ২০১৪ ও ২০১৮-তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটা ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দেশ ক্রমশ কর্তৃত্ববাদের দিকে অধঃপতিত হতে পারে, কঠিন ও দুর্গম হয়ে উঠতে পারে ফ্যাসিবাদ। বাংলাদেশ তেমন আরেকটি ভয়ংকর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সবচেয়ে জনপ্রিয়তা প্রস্তাব হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন ঘটিয়ে তার অধীনে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। চলমান আওয়ামী শাসনবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিসমূহ এই দাবিতে অটল। আর ‘অপহৃত নির্বাচনের’ মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া বর্তমান সরকার তা মানতে নারাজ!

এমন সিদ্ধান্তে তারা অটল থাকলে ২০২৪ সালের শুরু থেকে পশ্চিমা বিশ্বের বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে বাংলাদেশের পড়ার আশঙ্কা বা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটা কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাম্য নয়, বরম অসম্মানজনক। এতে মানুষের জীবন-জীবিকা, দেশের অর্থনীতি ও সমাজ সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে! ১২তম জাতীয় নির্বাচন ত্রিপক্ষীয় অনুদার আঞ্চলিক শক্তির বিরুদ্ধে ইন্দো-প্যাসিফিকের নিয়ম ভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রতি আমাদের আন্তর্জাতিক সারিবদ্ধতার কারণে আরও বেশি চাপ হয়ে উঠেছে। আগামী ৫০ বছরের জন্য আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য আগামী নির্বাচন সেজন্য সকলের জন্য জরুরি।