যে কারণে মেয়েকে খু’ন করতে হয়েছে, জানালেন প্রবাসী আলতাফ

নোয়াখালীর পৌর এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে খুন করছেন আলতাফ হোসেন নামে একজন। ইতোমধ্যে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর আসামি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, মায়ের কারণে মেয়েকে খুন করতে হয়েছে। না হলে মেয়েকে খুনের পরিকল্পনা ছিল না।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বুধবার (১৪ জুন) রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোসলেহ উদ্দিন মিজানের কাছে জবানবন্দি দেন তিনি। এর আগে একই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বার্লিংটন মোড়ে মানিক মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার এলাকার মৃত আবুল কালামের ছেলে আলতাফ হোসেন (২৮)। নিহতরা হলেন, ফজলে আজিম কচি মিয়ার স্ত্রী নূর নাহার বেগম (৪৫) ও তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তী।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, নূর নাহার বেগমের সঙ্গে প্রবাসে থাকা অবস্থায় রং নাম্বারে পরিচয় হয় আসামি আলতাফ হোসেনের। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আসামি আলতাফকে ওমান থেকে দেশে এসে ব্যবসা করার জন্য বলে নূর নাহার এবং ব্যবসার সম্পূর্ণ মূলধন এবং তার সব দেনা বহন করার আশ্বাস দেন।
সেই আশ্বাসে ওমানের ভিসা বাতিল করে ৮ জুন পরিবারের অগোচরে দেশে এসে একটি ভাড়া মেসে ওঠেন আলতাফ। পরে আলতাফ ১০ জুন নূরু নাহারের সঙ্গে দেখা করলে দু-একদিনের মধ্যে টাকা এবং তার বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিতে বলেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে ঘোরাঘুরি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আলতাফ।
তিনি আরও বলেন, সকালে টাকা চাওয়ার জন্য নূর নাহারের মাইজদীর বাসায় যান আসামি। এ সময় নূর নাহার টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নূর নাহার হুমকি দেন যে, টাকা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলতাফকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হবে। এ সময় আসামিকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে গেলে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে নূর নাহারকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। চিৎকার শুনে মাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে আসামি নূর নাহারের মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তীকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে প্রিয়ন্তী দৌড়ে নিচ তলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দেন। ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেওয়ার পর প্রিয়ন্তী ডাইনিং রুমের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু আসামি আলতাফ হোসেন দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে বুধবার (১৪ জুন) সকালে নূর নাহারকে ভয় দেখানের জন্য বাজার থেকে ছুরি কিনে তার বাসায় যান আলতাফ। টাকার জন্য কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আলতাফকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখালে সে ছুরি দিয়ে নূর নাহারকে আঘাত করতে যান। নূর নাহার দৌড়ে মেয়ে প্রিয়ন্তীর কক্ষে যান। সেখানেই ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় মাকে বাঁচাতে মেয়ে এলে তাকেও আঘাত করা হয়। তবে মেয়েকে হত্যা করার কোনো পরিকল্পনা আলতাফের ছিল না বলে তিনি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।