জাতীয়: বিএনপি যেন কোনো অশুভ পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ দেশে যেকোনো মূল্যে নির্বাচন হবে এবং জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দেবে।’
গতকাল শনিবার অপরাহ্ণে রাজধানীর কাওলায় সিভিল অ্যাভিয়েশন মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমার এই কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন যে উন্নয়ন চাইলে নৌকা মার্কা, ধ্বংস চাইলে ওই বিএনপি-জামায়াত এরা। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখেই আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার একটাই কথা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি, কাজেই ভোট দিলে আছি, না দিলে নেই। কিন্তু দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। আমরা চাই নৌকা মার্কায় ভোট দিন। যাতে আবারও আপনাদের সেবা করতে পারি।’
বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে কী আসবে না তা নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। এটাই স্বাভাবিক। তারা যে নির্বাচন করবে তাদের নেতাটা কে? তারা যে নির্বাচন করবে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবে? ওই দুর্নীতিবাজ পলাতক আসামি! না এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী! এজন্য তাদের চেষ্টা নির্বাচন বানচাল করার।’ বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মা-তো অসুস্থ। আপনারা অনশন করেন ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না। এটা কেমন ছেলে সেটা আমার প্রশ্ন। মা-তো অসুস্থ মরে মরে। সে নাকি যখন তখন মরে যাবে। মাকে দেখতে আসে না কেন? আমি তো বলব মাকে দেখতে আসুক।
আরও পড়ুন: শিগগিরই অন্তবর্তীকালীন সরকার
নির্বাচন হলেই তারা জানে নৌকা মার্কা ভোট পাবে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। তাই তারা নির্বাচনকে নষ্ট করতে চায়। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। কাজেই এটা যেন করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আর বিশেষ করে ঢাকাবাসী আপনাদেরও আমি সতর্ক করে দিচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য সমবেত জনতার অঙ্গীকার চাইলে সবাই দুই হাত তুলে সমস্বরে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু নিজে ভোট দিলে হবে না। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, দেশ-বিদেশে সবার কাছে প্রচার করতে হবে। প্রচার করতে হবে যে এ দেশের উন্নয়নের জন্য একমাত্র আওয়ামী লীগই রয়েছে। তারাই একমাত্র এ দেশের উন্নয়ন করতে পারে, গণতন্ত্র দিতে পারে।’
সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া আরও বক্তৃতা দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম; ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান, আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমুখ।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির পরিচালনায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে গত ৭ অক্টোবর এ সমাবেশটি হওয়ার কথা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য পিছিয়ে দিয়ে তা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। প্রখর সূর্যের তাপ উপেক্ষা করে সকাল থেকেই নানা রঙের পোশাক পরে স্লোগানে স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে দলে দলে উৎফুল্ল নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ সমাবেশে যোগ দেন এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকাটি জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের ঢাকার বদলে যাওয়া, আজকে বাংলাদেশ বদলে গেছে, যানজট দূর করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এই মেট্রোরেল এরপর ধাপে ধাপে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত যাবে। মেট্রোরেলের সঙ্গে পাতাল রেলও যাতে হয় সে প্রকল্পের কাজও চালু হয়েছে। বিদ্যুৎ নিরাপত্তার জন্য পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকায় সার্কুলার ওয়াটার ওয়ে নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। এমনকি আগামীতে পুরো ঢাকাকে ঘিরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। কিন্তু এজন্য কোনো জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন পড়বে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে, সমুদ্রবন্দরগুলো করা হয়েছে। মহেশখালীতে “ডিপ সি” পোর্ট হয়েছে, এখন কর্র্তৃপক্ষ গঠন করে পুরোদমে চালু করা হবে।’
রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, বনানী ওভারপাস, কালশী ফ্লাইওভার এবং আরও নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে যাচ্ছি। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত মাস র্যাপিড ট্রানজিটও প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে ঢাকা উত্তর এলাকার যেসব জায়গায় রেলক্রসিং রয়েছে সেগুলোতেও ওভারপাস করে দেবে আওয়ামী লীগ সরকার, যাতে রেলের জন্য আটকে থাকতে না হয়। কেননা সবার সুযোগ-সুবিধা দেখাটাই আমাদের দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র নৌকা মার্কা, এই মার্কা ক্ষমতায় থাকলেই সব হবে। আর ওই লুটেরা দুর্নীতিবাজ, খুনি, ডাকাত, চোর এরা ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই দেশকে এরা যেন ধ্বংস করতে না পারে।’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। কক্সবাজারে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা বিদেশে এখানে-সেখানে ধরনা দেয়। ওইসব ধরনা দিয়ে কোনো কাজ হবে না। জনগণের শক্তি বড় শক্তি। আমি সেই জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাস করি। তাদের ওপরই আমার আস্থা আছে।’
পঁচাত্তরের বিয়োগান্ত অধ্যায় স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সেদিন বাবা, মা-ভাই সব হারিয়েছি। সব হারিয়ে দেশে ফিরে এসে পেয়েছি এই বাংলাদেশের জনগণ। আজকে বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। আমার আপনজন। কাজেই তাদের জন্য কাজ করাকে কর্তব্য-দায়িত্ব হিসেবেই নিয়েছি।’ বাসস