সারা বাংলা

মেয়েদের বলিনি আমার পেশা কী, যার এমন অমূল্য সন্তান আছে, সে দরিদ্র হয় কীভাবে!

Is Jennifer Aniston currently in a relationship?

আমি কোনওদিন আমার মেয়েদের বলিনি আমার পেশা কী। আমি কখনও চাইনি তারা আমার জন্যে লজ্জিত হোক। যখন আমার ছোট মেয়েটা জিজ্ঞেস করত, আমি কী কাজ করি, আমি সাধারণত সংকোচের সঙ্গে বলতাম, আমি একজন লেবার।

আমি প্রতিদিন কাজ থেকে বাড়ি ফেরার আগে পাবলিক টয়লেটে স্নান করতাম যাতে তারা কোনওভাবে আকার-ইঙ্গিতেও বুঝতে না পারে আমার কাজ কী। আমি আমার মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চেয়েছি, তাদের লেখাপড়া শেখাতে চেয়েছি।

আমি চেয়েছি তারা সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে মানুষের সামনে দাঁড়াক। আমাকে সবাই যেমন নিচু নজরে দেখে, আমি কখনও চাইনি আমার মেয়েদেরকে কেউ সেভাবে দেখুক। মানুষ সবসময় আমাকে অসম্মান করেছে। আমি আমার উপার্জনের প্রত্যেকটা পয়সা আমার মেয়েদের লেখাপড়ার জন্যে ব্যয় করেছি।

আমি কখনও একটা নতুন জামা কিনিনি, বরং সেই টাকা দিয়ে তাদের নতুন বই কিনে দিয়েছি। আমি আমার জন্যে তাদের কাছে যে-অর্জন প্রত্যাশা করেছি, তা আর কিছু নয়, তা হল– সম্মান। আমি ছিলাম একজন মেথর। আমার মেয়ের কলেজে ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখের আগের দিন আমি তার ভর্তির ফি জোগাড় করতে পারিনি। সেদিন আমি কোনও কাজও করতে পারিনি,

নোংরার স্তূপের পাশে বসে ছিলাম। খুব চেষ্টা করছিলাম চোখের জল লুকোনোর। সেদিন কাজ করার মতো কোনও ক্ষমতা আমার ছিল না। আমার সহকর্মীরা আমাকে দেখছিল, কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতে পর্যন্ত এগিয়ে এল না। আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম! ভাঙাবুক চেপে হতাশায় মুষড়ে পড়লাম। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না, বাড়ি ফিরলে মেয়ে যখন আমাকে ভর্তি-ফি-র কথা জিজ্ঞেস করবে, আমি কী বলব! আমি জন্মগতভাবেই হতদরিদ্র। আমার বিশ্বাস ছিল আমার মতো একজন গরিব মানুষের সঙ্গে কখনও ভাল কিছু হতে পারে না।

আরো পুড়ুনঃ  চিকিৎসায় যুক্ত থাকতে পারবেন না সেন্ট্রালের সেই ডাক্তার

কাজের শেষে সব মেথররা আমার কাছে এল, পাশে বসল আর জিজ্ঞেস করল, আমি তাদেরকে আমার ভাই বলে মনে করি কি না। আমি উত্তর দেওয়ার আগেই তারা তাদের একদিনের সমস্ত আয় আমার হাতে তুলে দিল। আমি যখন সেই টাকা নিতে আস্বীকার করলাম, তারা পাল্টা আমাকে বলল, “আমরা সবাই দরকার হলে আজকের দিনের জন্যে উপোস থাকব, কিন্তু আমাদের মেয়েকে কলেজে পড়তেই হবে।” আমি কোনও উত্তর দিতে পারলাম না। সেদিন বাড়ি ফেরার আগে আমি স্নান করিনি, একজন মেথর হিসেবেই সগর্বে বাড়ি ফিরেছিলাম।

আমার বড় মেয়ে খুব শিগগির বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করবে। সে একটা পার্টটাইম কাজও করে। তাছাড়া ওরা তিনজনই টিউশন করে। আমাকে ওরা আর কিছুতেই কাজে যেতে দেয় না। কিন্তু প্রায়ই বড় মেয়েটা আমাকে পুরনো কাজের জায়গায় নিয়ে যায়। আমাকে-সহ আমার সকল সহকর্মীদের ও খাওয়ায়। ওরা হাসে আর জিজ্ঞেস করে, “কেন, মা, তুই মাঝে-মাঝেই এমন খাওয়াস?” আমার মেয়ে উত্তর দেয়, “সেদিন তোমরা সবাই আমার জন্যে উপোস করেছিলে, তাই আজ আমি এই জায়গায় এসে দাঁড়াতে পেরেছি। প্রার্থনা করো, একদিন যেন আমি তোমাদের সকলকে রোজ খাওয়াতে পারি।” আজ আমার আর মনে হয় না আমি একজন গরিব মানুষ। যার এমন অমূল্য সন্তান আছে, সে দরিদ্র হয় কীভাবে!

আরো পুড়ুনঃ  বাংলাদেশের কাছে বিমান সংস্থাগুলোর পাওনা ২১ কোটি ৪১ লাখ ডলার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker